হৃদরোগকে আগে বয়স্ক মানুষ, বিশেষ করে ষাটোর্ধ্বদের রোগ হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। সেই ধারণা দ্রুত বদলাচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা ক্রমে বেশি করে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কম বয়সীদের, এমনকি ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে এই বৃদ্ধির হার ১৭ গুণ বেশি। শুধু আক্রান্ত নয়, হৃদরোগে কম বয়সীদের মৃত্যুর হারও দ্রুত বাড়ছে। গতকাল কালের কণ্ঠে এ বিষয়ে প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে আরো অনেক উদ্বেগজনক তথ্য। যেসব কারণে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার এত দ্রুত বেড়ে চলেছে, সেই কারণগুলো নিয়ন্ত্রণে এখনো জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর মারা যায় দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ, যার ২৪ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক। আরেক গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের কারণ বায়ুদূষণ। এ ছাড়া আছে মদ্যপান, জাংক ফুড, অধিক কোলেস্টেরল ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, আয়েশি জীবনযাপন, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের আরেক গবেষণার ফলাফলে উল্লেখ করা হয়, অত্যধিক লবণযুক্ত এবং প্যাকেটজাত খাবারে হৃদরোগী বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে বহুল প্রচলিত ৬১ শতাংশ বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ইত্যাদির প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি লবণ রয়েছে। ৩৪ শতাংশ খাবারে নিরাপদ মাত্রার দ্বিগুণ লবণ পাওয়া গেছে।
দেশে হৃদরোগের ঝুঁকি যেভাবে বাড়ছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। আক্রান্তদের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধাও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কিন্তু চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলো দূর করার জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া। উন্নত দেশগুলোতে খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাবারের উৎপাদন ও বিক্রয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
আমাদেরও তেমন করেই উদ্যোগ নিতে হবে। চিপস, চানাচুর, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি—এসব খাবারের ভোক্তা সাধারণত কম বয়সীরা। এগুলোতে লবণের মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে মানুষকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সুযোগ করে দিতে হবে।