আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে। কিছু উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফলে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েছে। লোড শেডিংয়ের পরিমাণও বেড়েছে।
এ অবস্থায় সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছে। তাতে সর্বশেষ যোগ হয়েছে সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত করা। এর আগে দোকানপাট, বিপণিবিতান, হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বুধবার থেকে অফিস সময়ের নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে।
কিন্তু প্রথম দিনে এ কারণে অনেক অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরে থাকা বেশির ভাগ সরকারি অফিস বুধবার সকাল ৮টায় বন্ধ পাওয়া গেছে। কোনো কোনো অফিস সকাল ৯টায়ও খুলতে দেখা গেছে। অন্যদিকে একই সময়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হয়। ফলে সকাল ৮টার আগে গণপরিবহনে অত্যধিক ভিড় এবং রাস্তায় ব্যাপক যানজট হয়। এতে মানুষের ভোগান্তিও চরমে ওঠে।
বর্তমানে সারা বিশ্বই এক ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন শীতকাল অনেক দেশের জন্যই বিপর্যয়কর হবে। জ্বালানি তেলের সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক দেশে চরম দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কার অবস্থা খুবই খারাপ।
পাকিস্তান, ভুটানসহ আরো কিছু দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সাবধান হতেই হবে। সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। কিন্তু এর সুফল পেতে হলে সবাইকে আন্তরিক ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রথম দিনে তার কিছুটা অভাব দেখা গেছে।
সচিবালয়ে প্রথম দিনে মন্ত্রী ও সচিবরা সকাল ৮টায় অফিসে এসে অন্যদের যথাসময়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারতেন। কিন্তু প্রথম দিনে তা খুব কমই দেখা গেছে। সবচেয়ে খারাপ দৃশ্য দেখা গেছে জেলা বা উপজেলায়। হয় সকাল ৮টায় অনেক সরকারি অফিসের তালাই খোলেনি, না হয় পিয়ন তালা খুলে ফ্যান, এসি চালিয়ে দিয়ে বসে আছেন, কর্মকর্তাদের দেখা নেই।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরুর সময় ও অফিস সময় এক হওয়ায় গণপরিবহনের অভাব ও যানজটের যে সমস্যাটি প্রথম দিন প্রকটভাবে দেখা গেছে, দ্রুত তার সমাধান হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে দুটোর সময় কিছুটা আগে-পরে করা যেতে পারে। গণপরিবহন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করার সুফল পেতে হলে শুক্র ও শনিবারের বদলে সপ্তাহের অন্য দুই দিন করা যেতে পারে। তাতে যানজট সমস্যাও অনেক কমবে বলে আশা করা যায়। আমরা চাই, জাতীয় প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিত হোক।