জনসাধারণের চলাচল ও সরকারের বিবিধ সেবা প্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার সড়ক, সেতু বা বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে বহু প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। সেসব প্রকল্পের কথা শুনে মানুষও আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, জনগণকে হতাশ হতে হয়। তার একটি বড় কারণ নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া এবং প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে চলাচলের বিদ্যমান সুবিধাগুলো নষ্ট করা।
প্রকল্প বাস্তবায়নের এমনই এক হতাশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নড়াইলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে নবগঙ্গা নদীর বারইপাড়া ঘাটে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ প্রায় ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৬০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এরপর তিনবার নকশা বদল এবং পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। শেষ দফায় মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। খরচও বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকোটি টাকা। মানুষ এখন সেতুর পিলার দেখে এবং দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
নড়াইলের বহু মানুষকে চাকরি, ব্যবসা বা অন্যান্য কাজে কালিয়া এবং কালিয়া হয়ে গোপালগঞ্জে যাতায়াত করতে হয়। পণ্য পরিবহনের জন্যও এই পথটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরেই নবগঙ্গার ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। সেই দাবি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেতুর কাজের অগ্রগতি দেখে তারা হতাশ। সেতুর নকশা প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সর্বত্রই অবহেলা ও অদক্ষতার ছাপ স্পষ্ট। জানা যায়, প্রকল্পের প্রথম যে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র দুটি পিলার নির্মিত হয়েছিল।
বর্ষায় পানি বৃদ্ধির পর দেখা দেয় জটিলতা। তখন সেতুর উচ্চতা বাড়াতে নতুন একটি পিলার নির্মাণের জন্য নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। ৯ নম্বর পিলারে একাধিক বালুবোঝাই বাল্কহেডের ধাক্কা লাগে এবং ২০২১ সালে ৬ সেপ্টেম্বর এমনই এক ধাক্কায় পিলারটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর তৃতীয় দফা নকশায় পরিবর্তন আনা হয়।
৯ নম্বর পিলার বাদ দিয়ে ৮ ও ১০ নম্বর পিলারের ওপর স্টিলের স্প্যান বসানোর প্রস্তাব করা হয়।উপযোগিতা বিবেচনা করেই প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু সে কাজের মেয়াদ পাঁচ দফা বাড়ানো কাঙ্ক্ষিত নয়। সব তথ্য-উপাত্ত বিবেচনা করেই সেতুর নকশা প্রণয়ন করার কথা। সেই নকশা তিনবার বদলাতে হবে কেন? উন্নয়নকাজে এ ধরনের অদক্ষতা ও অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই, বারইপাড়া সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হোক।