খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কয়েক বছর ধরেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচার, লাগামহীন খেলাপি ঋণ, ব্যাংকে তারল্য সংকটসহ আরো অনেক কারণে ব্যাংক খাতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে এরই মধ্যে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। এর মধ্যে একটির কাজ হবে ব্যাংক খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনাসহ ঋণ আদায় প্রক্রিয়া নিরূপণ এবং অন্যটির কাজ বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আসা। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য সহায়তা দিচ্ছে। গত দুই মাসে ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন, আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার রোধ, মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদ হার বৃদ্ধিসহ আরো কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে সমস্যা এবং সংকট নতুন কিছু নয়।
দীর্ঘদিন থেকে ব্যাংকিং খাতের অগ্রযাত্রায় অনেক সমস্যা বিভিন্ন সময়ে দেখা দিলেও সন্তোষজনক সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে কোনো রকমে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক অনিয়ম হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কারের উদ্দেশ্যে গভর্নরের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। এখন গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।
ব্যাংকিং খাতের সমস্যা হচ্ছে একদিকে আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, আরেক দিকে আইনের ভেতরগত দুর্বলতা। ব্যাংকগুলো গতানুগতিক পথে হাঁটছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রথমেই প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকের কর্মতৎপরতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি বাড়াতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত পদক্ষেপ ও নীতি সহায়তা, বিশেষ করে নজরদারি বাড়াতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে। এর পাশাপাশি গতানুগতিকতার বাইরে ব্যাংকগুলোকে অর্থায়নে সৃজনশীলতা দেখাতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে ব্যাংকিং সেক্টর সবল হবে।