টিকা পাওয়া এবং তা মানুষের দেহে প্রয়োগ করে সুফল পাওয়ার আগপর্যন্ত কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় জাতীয় সমস্যা হিসেবেই থেকে যাচ্ছে। আমরা অনেকটা অসহায়ের মতো দেখতে পাচ্ছি, শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। যদিও পর্যাপ্ত পরীক্ষার অভাবে সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তবু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল, তা আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সাধারণভাবে বলা হচ্ছে, এটা করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। আগামী দিনগুলোতে এর বেগ ও শক্তি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তা যদি হয়, তাহলে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো কতগুলো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছি। প্রথমত, কোভিডের বিপদ বাড়ছে, কিন্তু এই রোগের সঙ্গে আমাদের মানসিক সম্পর্ক অনেকটাই বদলে গেছে। প্রথম পর্যায়ের সেই ভয় কেটে গেছে, ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে ব্যাপক শিথিলতা চলে এসেছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি, এমন পরিস্থিতিতে কখনো না কখনো প্রত্যেক ব্যক্তিরই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। আমরা সম্ভবত ইতিমধ্যে সে রকম পরিস্থিতির মধ্যেই রয়েছি; কিন্তু এর বিপদ অনুধাবন করতে পারছি না।
দ্বিতীয়ত, সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। স্মরণ করা যেতে পারে, অক্টোবর মাসে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২০-এর নিচে নেমেছিল। কিন্তু নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মৃত্যু আবার বাড়তে শুরু করে এবং তিন সপ্তাহ ধরে দৈনিক গড়ে ৩০ জনের বেশি কোভিড রোগী মারা যাচ্ছেন। এমনকি কোনো কোনো সপ্তাহে পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সামান্য কমলেও রোগী মারা যাচ্ছেন বেশি। যেমন সর্বশেষ পাঁচ দিন ধরে শনাক্তের গড় হার ছিল ১২ শতাংশের নিচে, কিন্তু ওই পাঁচ দিনের মধ্যে দৈনিক গড় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩২। অর্থাৎ সংক্রমণ শনাক্তের হার যা-ই হোক না কেন, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার প্রবণতা অপরিবর্তিত থাকছে।
এই যখন পরিস্থিতি, যখন সংক্রমণের নতুন বিস্তার রোধের কোনো সক্রিয় উদ্যোগ কার্যত নেই, তখন কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু ন্যূনতম মাত্রায় রাখার চেষ্টা করা একান্ত জরুরি। সে জন্য প্রথম করণীয় হচ্ছে কোভিড চিকিৎসার বিদ্যমান ব্যবস্থার আরও উন্নতি ঘটানো; তাদের সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা বাড়ানো। শুধু ঢাকায় বা বড় শহরগুলোতে নয়, জেলা শহরগুলোতেও। কোভিড চিকিৎসার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অক্সিজেনের প্রাপ্যতা। এদিকে মনোযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। হাই ফ্লো অক্সিজেনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে অনেক রোগীর আইসিইউ সেবার প্রয়োজন এড়ানো সম্ভব। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোভিড হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য লোকবলের পর্যাপ্ততা ও সুব্যবস্থাপনা। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি রাখা চলবে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো কোভিডে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং এদিকে মনোযোগ বাড়ানো দরকার।
কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু এড়ানোর আরও একটি সম্ভাব্য উপায় হলো যথাসময়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ কোভিড রোগী বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন, অবস্থা গুরুতর না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যাপারে অনাগ্রহ রয়েছে। কিন্তু এটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, শেষ সময়ে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের বিশেষ কিছু করার থাকে না। ইতিমধ্যে একাধিক জরিপে দেখা গেছে, হাসপাতালে নেওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সর্বাধিক সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ ওই রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে একেবারে শেষ সময়ে। এই প্রবণতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। রোগীকে যথাসময়ে হাসপাতালে নিতে হবে।
আর যে কথা সব সময়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো সবাইকে মেনে চলতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন