করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেন যোগাযোগ চালু করার সময় স্টেশনে টিকিট বিক্রির পরিবর্তে অনলাইনে টিকিট বিক্রির নিয়ম চালু করে। ফলে ঈদের ছুটির সময় বাস ও লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও ট্রেনের যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পেরেছেন। আবার ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেকে ফিরে গেছেন বলেও অভিযোগ আছে।
বৃহস্পতিবার রেল মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ট্রেনে ভ্রমণের জন্য কেনা টিকিট, যাত্রার স্থান থেকে ফেরার টিকিট অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদের টিকিট হস্তান্তরযোগ্য নয়। একজনের টিকিটে অন্য কেউ ভ্রমণ করলে তাঁকে টিকিটের সমপরিমাণ জরিমানা দিতে হবে। এমনকি তাঁকে তিন মাসের কারাদণ্ডও ভোগ করতে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপ থেকে নিজ নিজ টিকিট কেটে যাত্রীদের রেল ভ্রমণ এবং অন্যের টিকিটে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একজনের টিকিটে অন্য লোকের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আগেই ছিল। এত দিন কার্যকর করা হয়নি; ১৬ আগস্ট থেকে কার্যকর করা হবে। কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা কার্যকর করার দায়িত্বও তাদেরই। একজনের টিকিটে অন্যের ভ্রমণের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা থেকেই থাকে, তাহলে বছরের পর বছর ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি হলো কীভাবে? এর সঙ্গে রেলওয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তা–কর্মচারী যে জড়িত, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এসব বন্ধ করতে না পারলে কোনো বিধিনিষেধ কার্যকর করা সম্ভব নয়। বরং টিকিট কেনার ওপর যত কড়াকড়ি আরোপ করা হবে, তত দুর্নীতি বাড়বে।
দ্বিতীয়ত, রেল কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত কি করোনাকালের জন্য, না সব সময়ের জন্য? আগে বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি হতো স্টেশন থেকে সরাসরি। অনেক দেশেই অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি করা হয়। সেদিক থেকে রেলওয়ের নেওয়া সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা আছে। তবে তাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে এখনো সব নাগরিকের অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাঁরা কি ট্রেন ভ্রমণের বাইরে থাকবেন? আরেকটি প্রশ্ন হলো পরিবারের ছোট ছোট সদস্য, যারা এখনো জাতীয় পরিচয়পত্রের আওতায় আসেনি, তারা কীভাবে টিকিট কিনবে?
ট্রেনের টিকিটের কালোবাজারি বন্ধ হোক, এটা সবারই কাম্য। তাই বলে অনলাইনে টিকিট বিক্রির নামে সাধারণ যাত্রী তথা গরিব ও স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার না হন, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে। সাশ্রয়ী গণপরিবহন হিসেবে ট্রেনই তাঁদের প্রধান ভরসা।
হবু চন্দ্র রাজার গবু চন্দ্র মন্ত্রী। মেধা, মানবিকতা কোনোটাই এদের নাই, তারা আবার দেশ চালায়।