বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর অন্যতম দেশকে তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেওয়া। এরই মধ্যে দেশ এ খাতে যথেষ্ট এগিয়েও গেছে। শহরের সীমা ছাড়িয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির মোবাইল, ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের সহজলভ্য হচ্ছে। কিন্তু প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, তেমনি ভালোর বিপরীতে মন্দও থাকে। একইভাবে তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের পরিমাণও দ্রুত বেড়ে চলেছে।
ক্রমেই অধিক হারে নিরীহ মানুষ এ ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের মধ্যে ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণার ফাঁদ পাতার মতো সামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড সংগঠিত ও সংঘটিত করা পর্যন্ত বহু রকম অপরাধই রয়েছে। দিন দিন বাড়ছে এসব অপরাধের পরিধি।
বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের গত বছরের এক গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে যত সাইবার অপরাধ হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশের শিকার হচ্ছে কিশোরীরা। প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা ১১ ধাপে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে চারটিই নতুন। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে ৬৭.৯ শতাংশ নারী। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের শিকারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে তারা।
এই অপরাধের শিকার নারীর হার ১৬.৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অনলাইনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি। ছবি বিকৃত করে অনলাইনে অপপ্রচারের শিকার হওয়া নারীর হার ১১.২ শতাংশ। জরিপে বলা হচ্ছে, পর্নোগ্রাফিকেন্দ্রিক অপরাধ ২.২৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.০৫ শতাংশে। অনলাইনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকির ঘটনা ১৩.৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭.৬৭ শতাংশ।
দুই বছর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সাইবার অপরাধ দমনে সরকার নানা ধরনের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগও নিয়েছে। সাইবার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে গঠন করা হয়েছে সাইবার ইউনিট।
ডিজিটাল আইন, সাইবার অপরাধ দমনে নানা ধরনের উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবেই কি সাইবার অপরাধ বাড়ছে? ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ কতটা আছে, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত ফরেনসিক ডিভাইস কি আছে? উপযুক্ত ল্যাব কি গড়ে উঠেছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও এখন জরুরি। কাজেই শুধু আইন করে বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বসে থাকলে চলবে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগও এ ক্ষেত্রে জরুরি।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন