বিশ্ব অর্থনীতি করোনা মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে। রাশিয়ার তেলসহ অনেক খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আর তার ফলে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে এলএনজিসহ জ্বালানি তেলের দাম।
কয়লা দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। এতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। উন্নত-অনুন্নত সব দেশেই মূল্যস্ফীতি ব্যাপক হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশেও গত জুন মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৭.৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
যুদ্ধের ফলে বিশ্বের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ইউক্রেন থেকে জাহাজে বিশ্বব্যাপী খাদ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার জ্বালানি তেল শুধু নয়, গম, ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য রপ্তানিও বিপুল পরিমাণে কমে গেছে। অনেক দেশ নিজেদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে খাদ্য রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে। আর এসবের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে ইউরোপসহ সারা বিশ্বে। খাদ্যসংকট ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে।
শ্রীলঙ্কার অবস্থা আমরা দেখছি। সেখানে খাদ্যদ্রব্য কেনার সামর্থ্য নেই বেশির ভাগ মানুষের। জ্বালানি তেলের অভাবে পরিবহন প্রায় বন্ধ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাকিস্তানসহ অন্তত আরো এক ডজন দেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি। যেকোনো সময় অচলাবস্থা নেমে আসতে পারে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা নেমে আসারও আশঙ্কা করছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে তো সাবধান হতেই হবে। বাংলাদেশকে আরো বেশি সাবধান হতে হবে এ কারণে যে করোনা ও যুদ্ধের প্রভাব ছাড়াও বাংলাদেশ এ বছর দুই দফা বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের এই গরমের সময় কোট-টাই পরে অফিস না করতে বলেছেন। গরমের সময় এসির তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রির নিচে নামিয়ে কাঁপতে কাঁপতে কোট-টাই পরে বসে থাকার বিলাসিতা অন্য সময়ে করা গেলেও বর্তমান সময়ে একেবারেই বেমানান। নিজের ও পরিবারের জন্য কয়েকটি গাড়ি চালানোর বিলাসিতাও ত্যাগ করতে হবে। এ ধরনের আরো অনেক অপচয় রয়েছে, যেগুলো এই ক্রান্তিকালে আমরা সহজেই ত্যাগ করতে পারি। প্রয়োজন না থাকলে ঘরের ফ্যান বা বাতির সুইচটা বন্ধ করে দিতে হবে। কোথাও কোনো ধরনের অপচয়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো বেশি জোর দিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যেন কোনো উপায়ে বাজার অস্থির করতে না পারে, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। ডলারসংকট যেন আরো প্রকট না হয় সে জন্য বিলাসী পণ্যের আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কম প্রয়োজনীয় প্রকল্প কমানোর পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয় করতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ভালোভাবেই পরিস্থিতি সামলে উঠতে সক্ষম হবে।