দুর্নীতি-অনিয়ম ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর তাতে জনজীবনও ক্রমে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। টাঙ্গাইলে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু গত বৃহস্পতিবার রাতে দেবে গেছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার কারণেই সেতুটি দেবে গেছে।
এ ধরনের খবর এর আগেও গণমাধ্যমে এসেছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক খবর থেকে জানা যায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। একই বছর চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কৃষি অধিদপ্তরের একটি ভবনে রডের বিকল্প হিসেবে বাঁশ ব্যবহার করার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। ওই একই বছর গাইবান্ধা সদর উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেটের কাজে রডের বদলে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করার খবর পেয়ে এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দেয়। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার একটি কলেজে ওয়াশ ব্লক নির্মাণকাজে লোহার রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে গত ফেব্রুয়ারিতে।
ভবন নির্মাণসহ সরকারের অনেক কাজেই মান রক্ষার বিষয়টি উপেক্ষিত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর আগে চুয়াডাঙ্গা, গাইবান্ধা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে সরকারি ভবন নির্মাণের অভিযোগগুলো যদি যথাযথভাবে তদন্ত হতো এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো, তাহলে আজ হয়তো টাঙ্গাইলে সেতু দেবে যেত না। ঠিকাদাররা যেমন মানসম্মত উপায়ে নির্মাণকাজ করতেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও ঠিকমতো কাজ তদারক করতেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার। তাহলে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন তৈরির কাজ পেয়েছিল, তারা নির্মাণকাজে নেই। তাদের পরিবর্তে অন্য কেউ এই নির্মাণকাজ করছিল?
পৌরসভার প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে—এত দিন তাঁরা কোথায় ছিলেন? কী দেখেছেন? তবু তদন্ত হোক। দায় কার, সেটি সবাইকে জানাতে হবে।