দেশে কয়েক লাখ মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের কর্মসংস্থান হয়েছে। বাণিজ্যের অনেকটা অংশই এখন মোবাইলের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে।
সব মিলিয়ে এটা বলা যায় যে একটি মোবাইল ফোন মানুষের জীবনধারাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মোবাইল ফোন এখন জীবনের প্রয়োজনীয়তা।
কী নেই এখানে? শুধুই কথা বলা নয়, প্রায় সব ধরনের সেবাই মিলছে মোবাইল ফোনে। জরুরি সেবা কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতা থেকে শুরু করে চিকিৎসকের পরামর্শ চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। শহরের সীমা ছাড়িয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির মোবাইল, ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
তথ্য-প্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের সহজলভ্য হচ্ছে।
তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের পরিমাণও দ্রুত বেড়ে চলেছে।
ক্রমেই অধিক হারে নিরীহ মানুষ এ ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের অপরাধের মধ্যে ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণার ফাঁদ পাতার মতো সামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড সংগঠিত ও সংঘটিত করা পর্যন্ত বহু রকম অপরাধই রয়েছে।
টেলকো-টেক প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামীণফোনের প্রধান বিনিয়োগকারী টেলিনর এশিয়ার গবেষণা ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সংস্করণের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯৭ শতাংশ তাদের ফোন ব্যবহারের সময় গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে।
সবচেয়ে বেশি ৮৯ শতাংশ উদ্বিগ্ন থাকেন বেবি বুমারস বা ৫৯ থেকে ৭৭ বছর বয়সীরা। আর ৬১ শতাংশ গ্রাহক মনে করেন, গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাগত সমস্যার কারণে দেশে মোবাইল প্রযুক্তির পুরোপুরি ব্যবহার বাড়ছে না। এ ছাড়া ৯৭ শতাংশ গ্রাহক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিজেদের দক্ষতা নিয়েও উদ্বিগ্ন।
তবে মুঠোফোন ব্যবহারে জীবনযাত্রার উন্নতির কথা জানিয়েছেন বেশির ভাগ গ্রাহক। দৈনন্দিন জীবনে আরো বেশি দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা অর্জনে সহায়তা করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি গ্রাহকদের ৯১ শতাংশ দিনের অর্ধেক সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।
বিশ্বজুড়েই সাইবার অপরাধ সংঘটনের নজির আছে। একটা বিশেষ শ্রেণির মানুষ সাইবার অপরাধে সম্পৃক্ত। সাইবার সন্ত্রাসও বিবেচনায় রাখার মতো একটি বিষয়। প্রযুক্তি মানুষের সামনে তথ্যের অসীম সম্ভাবনাময় দুয়ার উন্মোচন করেছে, এটা সত্য। একই সঙ্গে এটাও সত্য যে প্রযুক্তির কারণে অনেকের ব্যক্তিগত জীবন নানা যন্ত্রণার মুখে পড়েছে।
কাজেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক দক্ষতাও নিশ্চিত করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত বড়সড় ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে ধারাবাহিক ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও সাইবার সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।