আন্তর্জাতিক সিসাদূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ’ উপলক্ষে মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফ আয়োজিত জাতীয় কর্মশালায় এই আহবান জানানো হয়।
সিসাদূষণে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ কমে যায়। শৈশবে তারা এই যে ক্ষতির শিকার হয়, তার পরিণাম তাদের সারা জীবন বহন করতে হয়।
চিকিৎসার মাধ্যমেও এর প্রতিকার করা যায় না। এর ফলে যে ক্ষতি হয়, তা বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপির ৩.৬ শতাংশের সমান। সিসার বিষক্রিয়ার কারণে শিশুর বুদ্ধি কমে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের শেখার ক্ষমতা কমে যায়, আচরণগত সমস্যা দেখা দেয় এবং গোটা প্রজন্মের সম্ভাবনা কমে যায়। শুধু শিশুদের নয়, সিসাদূষণে বয়স্কদেরও নানা রকম শারীরিক ক্ষতি হয়, তার মধ্যে অন্যতম হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা।গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সিসাদূষণের ফলে সৃষ্ট কার্ডিওভাসকুলার রোগে বাংলাদেশে বছরে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, এর ফলে যে ক্ষতি হয়, তা ছিল বার্ষিক জিডিপির ৬ থেকে ৯ শতাংশের মতো। কাজেই সিসাদূষণের এই ভয়াবহতাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সিসাদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সিসা বা লিড–এসিড ব্যাটারির মানহীন রিসাইক্লিং কারখানা, সিসাযুক্ত রং, অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, সিরামিকের খাবার পাত্র, মসলা, খেলনা, প্রসাধনী, দূষিত খাবার, ইলেকট্রনিক বর্জ্য, সার, অস্বাস্থ্যকরভাবে তৈরি মাছের খাবার ইত্যাদি। অনেক শিল্পের অনিরাপদ কর্মপরিবেশ থেকেও কর্মীরা সিসাদূষণের শিকার হতে পারেন।সিসাদূষণ রোধে আমাদের আইন রয়েছে, কিন্তু সেসব আইনের বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। সিসাদূষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় অবিলম্বে এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তাদের কার্যক্রম জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মঙ্গলবারের কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যথার্থই বলেছেন, সিসা ও ভারী ধাতুর দূষণ একটি নীরব ঘাতক, যা মোকাবেলায় প্রয়োজন জরুরি ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ।সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিষাক্ত ধাতুর সংস্পর্শে আসার প্রধান উৎসগুলো চিহ্নিত করতে একটি বিস্তৃত ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আমরাও চাই, অতি দ্রুত তেমন একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সিসাদূষণ প্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু করা হোক। যেকোনো মূল্যে আমাদের শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা হোক।