প্রকাশিত একটি জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে জীবনের কোনো না কোনো সময় মানসিক সমস্যার শিকার হয়েছে ৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের এই মানসিক সমস্যার জন্য ইন্টারনেটকেই দায়ী করা হচ্ছে। ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব: কতটুকু সতর্ক হওয়া জরুরি’ শীর্ষক জরিপটি পরিচালনা করে অলাভজনক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। গত শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বায়নের এই সময়ে ইন্টারনেট ও তথ্য-প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ছাড়া আমাদের তরুণসমাজ এগিয়ে যেতে পারবে না। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়বে। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম ইন্টারনেট ব্যবহার করে মূলত বিনোদন বা সময় কাটানোর জন্য। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ (৩২.৯ শতাংশ) ইন্টারনেট ব্যবহার করে পর্নো সিনেমা দেখার জন্য।অনেকে নানা ধরনের সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। অনলাইনে বাজি ধরা ও বুলিংয়ের মতো অপরাধমূলক কাজেও অনেকে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে শিক্ষার্থীদের ২৩ শতাংশ ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে, ৩৫.৬ শতাংশ ডিপ্রেশনসহ নানা ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করে এবং ২০.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ইন্টারনেট আসক্তির কারণে শিক্ষায় তাদের মনোযোগ কমে যায় এবং শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যার কারণে একসময় আত্মহত্যার প্রবণতাও জন্ম নিতে পারে।আবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল লিটারেসি না থাকায় অনেকে নানা ধরনের ফাঁদে পড়ে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জরিপে দেখা যায়, ৬২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অপরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাদের মধ্যে ৬.২ শতাংশ দিনে ১১ ঘণ্টার বেশি এবং ১৯.৫ শতাংশ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আঁচল ফাউন্ডেশন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। তার মধ্যে আছে, স্কুল ও কলেজে ডিজিটাল লিটারেসি প্রগ্রাম পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা, আসক্তি কমাতে কাউন্সেলিং, থেরাপি ও শিক্ষামূলক অন্যান্য কর্মসূচি চালু করা এবং ইন্টারনেটনির্ভরতা কমাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমাজ ও পরিবারের সরাসরি যোগাযোগ বৃদ্ধি করা।
আমরা আশা করি, শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট আসক্তি কমানোর বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবেও বিশেষ গুরুত্ব পাবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সুস্থ বিনোদনের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ক্ষেত্রে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবারকেও অনেক বেশি সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।