করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চ মাসের মধ্যভাগ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য টেলিভিশনে ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে ক্লাস পাঠক্রম চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের যে যোগাযোগ হয়, টেলিভিশন বা অনলাইনে তা সম্ভব নয়। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেখানে শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরির ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়, সেখানে অনলাইন ক্লাস সবটুকু চাহিদা পূরণ করতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর যে মানসিক চাপ পড়েছে, তা কাটিয়ে ওঠাও সহজ নয়।
বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থার অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্রুত ক্লাসে ফিরে যেতে চায় ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। অভিভাবকরা, শিক্ষক, এমনকি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও সতর্কতার সঙ্গে দ্রুত স্কুল খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে। এ ব্যাপারে দুই মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকার বাইরের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তির তথ্য পর্যালোচনা করে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর এখনো এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এমনকি শিক্ষকরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারছেন না। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভর্তির হার ব্যাপকভাবে কমেছে। অর্থাৎ আগের বছরগুলোর চেয়ে ঝরে পড়ার হার এবার বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে ধাপে ধাপে স্কুলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ঘোষণা আসা প্রয়োজন। শিক্ষাপঞ্জি, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।