করোনা মহামারি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করছে। গত এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে আগের তুলনায় ৭১ শতাংশ। এ অবস্থায় সংক্রমণ ঠেকাতে এক সপ্তাহের জন্য সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। গত রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত এসব বিধি-নিষেধ বহাল থাকবে।
এসব বিধি-নিষেধের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট) এবং শপিং মল বন্ধ রাখা, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া, কাঁচাবাজার এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা ইত্যাদি। সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস শুধু জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেওয়া করতে পারবে।
শিল্প-কারখানা ও নির্মাণকাজ চালু থাকবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ শিল্প-কারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ঢাকার সুবিধাজনক স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। করোনা মহামারি আবার ব্যাপক হতে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ২৯ মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, তারই আলোকে লকডাউনের মতো করে এসব কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, এক-দুই সপ্তাহ সব কিছু বন্ধ রেখেও যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা যায়, সেটি দীর্ঘ মেয়াদে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার চেয়ে ভালো হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সরকারকে পরিপূর্ণ লকডাউনে যাওয়ারই প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাসহ জরুরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত পরিসরে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যেসব কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে করোনা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হবে কি?
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিধি-নিষেধগুলো যাতে কঠোরভাবে মেনে চলা হয় সে জন্য পুলিশ এবার অনেক বেশি তৎপর থাকবে। এদিকে গুগল কমিউনিটি মবিলিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে বাংলাদেশের লোকজন ঘরের বাইরে বেরিয়েছে সবচেয়ে বেশি। পর্যটন স্পট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ছিল উপচে পড়া ভিড়। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ছিল চরম উদাসীনতা।
মানুষ নিজে সচেতন না হলে পুলিশের পক্ষে সব বিধি-নিষেধ কার্যকর করা সম্ভব নয়। লকডাউন হতে পারে এমন আশঙ্কায় মানুষ যেভাবে ঢাকা ছেড়েছে, তাতে সংক্রমণ আরো ব্যাপক হতে পারে। নিজের সুরক্ষায় নিজেকেই আরো বেশি সচেতন হতে হবে। ১৮ দফাসহ আরোপিত বিধি-নিষেধগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।