গত ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস নামের কারখানায় আগুন লাগার পর মালিকপক্ষের অবহেলার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। একই সঙ্গে সামনে এসেছে সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থার দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টিও। শ্রমিক নেতাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, তদারকি সংস্থাগুলো সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না। শুধু হাসেম ফুডস নয়, এমন আরো অনেক কারখানা রয়ে গেছে নিয়মিত পরিদর্শনের বাইরে।
২০১২ সালে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধস, ২০১৬ সালে গাজীপুরের টাম্পাকো কারখানায় অগ্নিকাণ্ড কিংবা পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদামের আগুনের ঘটনার পর সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি সামনে এসেছে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর পণ্য ক্রয় ও কার্যাদেশ প্রদানকারী কম্পানিগুলোর চাপে তৈরি পোশাক খাতের সুরক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে দুর্ঘটনাপ্রতিরোধী করতে বেশ কিছু কাঠামোগত ও ব্যবস্থাপনাগত পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য পণ্য উৎপাদনকারী অন্য শিল্প-কারখানাগুলোর সুরক্ষাব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।
খাদ্যপণ্যসহ অন্য শিল্প-কারখানাগুলোর বড় অংশ এখনো গুদামের মতো পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে দাহ্য পদার্থ রাখা, সেখানেই শ্রমিকদের কাজের জায়গা। বিদ্যুৎ সংযোগও সেখানে। এ কারণে কোথাও আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এসব কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে কোনোভাবেই গুরুত্ব দেন না। শ্রম আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সের শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে কারখানায়। এসব কারখানায় নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকির দায়িত্বসরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের। তাদের প্রায় ৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। নতুন কারখানার লাইসেন্স দেওয়া এবং নবায়ন করাও তাদের কাজ।
কারখানা পরিদর্শন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রুটিনওয়ার্ক। সেই রুটিন কাজটি কি সঠিকভাবে হচ্ছে? এককথায় এর উত্তর, না। অবহেলার দায় এড়াতে পারে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অবহেলায় মৃত্যুর পরও শাস্তি না হওয়ায় মালিকপক্ষ বেপরোয়া। এই কারণে কারখানায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। শ্রম আইনে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শাস্তি ও জরিমানা কম হওয়ায় পার পেয়ে যায় মালিকপক্ষ। আরো একটি বিষয় চোখে পড়ার মতো। শ্রম আইন অনুযায়ী, কারখানায় কাজ করার সময় শ্রমিকদের নিরাপত্তার পুরো দায়দায়িত্ব মালিকের। কিন্তু দেশে গত দুই দশকে বহু কারখানায় দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহতের কোনো ঘটনায় মালিকের শাস্তি হওয়ার নজির নেই।
মালিকপক্ষ ও তদারকি সংস্থার দায়িত্বশীলতা আমরা প্রত্যাশা করি।