গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসেম্বরের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, সে অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে যে রেমিট্যান্স এসেছে, তা ২০২৩ সালের একই মাসের চেয়ে ৩২.৬৬ শতাংশ বেশি।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা সঞ্চিতি তা সত্ত্বেও অনেকটাই নড়বড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। তবে এর মধ্যে অত্যন্ত আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়ের প্রবাহ। এই প্রবাহ সরকার পরিবর্তনের পর ক্রমান্বয়ে বেড়েছে।বলার অপেক্ষা রাখে না যে প্রবাস আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়লেও প্রবাস আয়ের একটি বড় অংশ এখনো ব্যাংকের মাধ্যমে না এসে হুন্ডি বা অন্যান্য মাধ্যমে আসছে। হুন্ডি বন্ধ করা গেলে রেমিট্যান্স দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে নানা সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য বেশি থাকলে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণকারীদের কাছে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। তাই এই পার্থক্য কমাতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ প্রেরণ আরো সহজ, দ্রুত ও আকর্ষণীয় করতে হবে। আমাদের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স প্রেরকদের অবদান বিবেচনায় নিয়ে তাদের নানাভাবে সম্মানিত করা যায়। নানা রকম রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়। এ রকম আরো কিছু পদক্ষেপ নিলে প্রবাসী কর্মীরা হুন্ডির বদলে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে আরো বেশি করে উৎসাহিত হবেন। হুন্ডির প্রভাব থেকে সরিয়ে প্রবাসীদের অর্জিত শতভাগ অর্থ কিভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, সেটিই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে রিজার্ভ কমেনি, বরং বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানই রেমিট্যান্স বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। বেড়েছে রপ্তানি আয়ও। জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় এসেছে এক হাজার ৯৯০ কোটি ডলার।
রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়াতে আরো নানা ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। রেমিট্যান্সের টাকা যাতে গ্রাহক দ্রুত পেতে পারেন এমন ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যবস্থা নেবে।