নিজেদের গণতন্ত্র নিয়ে অনেক অহংকার করে যুক্তরাষ্ট্র। সারা দুনিয়ার গণতন্ত্র রক্ষায় অঘোষিত অভিভাবকের ভূমিকাও পালন করে দেশটি। কখনো কখনো শক্তি প্রয়োগ করতেও পিছপা হয় না। সেই যুক্তরাষ্ট্রেই আজ চরম অগণতান্ত্রিক ঘটনা ঘটছে। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল শুধু প্রত্যাখ্যানই করেননি, ক্রমাগত বিষোদগার করে গেছেন এখনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর দল। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে। চার ঘণ্টা ধরে পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে এক পুলিশসহ পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। আর এ হামলায় সরাসরি উসকানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে।
বিগত নির্বাচনে বিজয়ী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে গত বুধবার দুপুরে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন শুরু হয়। এর আগে হোয়াইট হাউসে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের সামনে ভাষণ দেন ট্রাম্প। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি কর্মী-সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এর পরই ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলের দিকে অগ্রসর হয় এবং নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
একপর্যায়ে তারা ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে এবং ভাঙচুর করে। ১৮১২ সালে যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনারা এই ক্যাপিটল ভবন পুড়িয়ে দিয়েছিল। তার পর থেকে এ পর্যন্ত ক্যাপিটল ভবনে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। আবার সেই হামলার ঘটনাটি ঘটল যুক্তরাষ্ট্রকে পুনরায় এক নম্বর করার ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্টের উসকানিতে, তাঁরই সমর্থকদের দ্বারা।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটি লজ্জাকর এক ঘটনা। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একে ‘অমর্যাদাকর ও জাতির জন্য লজ্জাকর’ এক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ একে ‘পুরোপুরি অসুস্থ ও হৃদয়বিদারক’ দৃশ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। নিন্দা জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ অনেক মিত্র দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া ও ইরানের পক্ষ থেকে বিদ্রুপাত্মক প্রতিক্রিয়াই জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে এখনো সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। তার ওপর ন্যাটো জোটের প্রধান কাণ্ডারি। সেই হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কথা ও কাজ সারা দুনিয়াকে প্রভাবিত করে। সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন ব্যতিক্রম। জলবায়ু চুক্তি, ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে আসাসহ এমন কিছু কাজ করেছেন, যা মিত্রদেরও অস্বস্তিতে ফেলেছে। বিশ্বের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী নেতৃত্ব সেসব বিচ্যুতি কাটিয়ে স্থিতিশীল বিশ্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাবেন।