অন্তর্বর্তী সরকার এসব অনিয়ম খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে ঠিকই, তবে তার আগেই দেশের টাকা চলে গেছে বিদেশে।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র) বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করে। ২০১০ সালে বিনা টেন্ডারে দায়মুক্তি আইন বা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন করে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। শুরুতে তিন বছরের জন্য এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হলেও দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে মেয়াদ।
রেন্টাল বিদ্যুৎকেগুলোকে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ সক্ষমতায় ব্যবহার করা হবে—এমন শর্তে লাইসেন্স দেওয়া হলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গড়ে চলেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ তিন মেয়াদে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে এক লাখ ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ না কিনলেও চুক্তি অনুসারে সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয় কেন্দ্র মালিকদের, এটি ক্যাপাসিটি চার্জ। গত ছয় অর্থবছরে এসব রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২১ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে বিপিডিবি।আধুনিক বিশ্বে বিদ্যুৎ ছাড়া মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অকল্পনীয়। শুধু বাতি বা বৈদ্যুতিক পাখা নয়, বহু ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামই এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে শিল্প-কলকারখানা, কর্মসংস্থান—সব কিছুই এখন মূলত বিদ্যুিনর্ভর।সে কারণে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে বিদ্যুতের চাহিদা। দেশে শিল্পায়নের প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে জ্বালানি ও বিদ্যুতের পর্যাপ্ততা। বিগত সরকারের আমলে সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। দেশের বাইরে টাকা পাচার করেছে। এটি জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এর বিচার হওয়া দরকার। রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে যারা বিদ্যুৎ খাতে হরিলুট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।