দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশাপাশি অবসরভোগীদের একটি বড় অংশের নির্ভরতা সঞ্চয়পত্রে। মধ্যবিত্তের সীমিত সঞ্চয় আর অবসরভোগীদের চাকরিজীবন শেষে পাওয়া এককালীন টাকা নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের জায়গা ছিল সঞ্চয়পত্র। মাসের শেষে পারিবারিক ব্যয়ের অনেকটাই নির্বাহ হতো সঞ্চয়পত্রের পাওয়া মুনাফা থেকে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সঞ্চয়পত্র চালুর উদ্দেশ্যই ছিল স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, যাতে অল্প সঞ্চয় দিয়ে তাঁরা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানের পাশাপাশি নিজেদের আয়ের একটি উপায় করে নিতে পারেন। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের জন্যই এই প্রকল্পের বিনিয়োগসীমাও বেঁধে দেওয়া আছে। সঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু বিনিয়োগকারীরা লাভবান হন না, সরকারও লাভবান হয়।
জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদ পূর্তির পর বিনিয়োগ করা অর্থও ফেরত দেওয়া হয়।
গত বছর জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা কমিয়ে দেয় সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এখন সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ওপর নতুন মুনাফার হার নির্ধারণ করে দিল সরকার। নতুন এই হার অনুযায়ী ছয় রকমের জাতীয় সঞ্চয়পত্রের স্কিমে এখন থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফা মিলবে কম। বিনিয়োগসীমা ৩০ লাখ টাকা পেরিয়ে গেলে লাভ আরো কমে আসবে। তবে ১৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার আগের মতোই থাকবে।
গত মঙ্গলবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয়ের জন্যই নতুন এই মুনাফার হার প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া যৌথ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিনিয়োগকারী সব সঞ্চয় স্কিমে মোট বিনিয়োগের ওপর প্রযোজ্য হারে মুনাফা পাবেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরমেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১.২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।
নতুন নিয়মে এই সঞ্চয়পত্রে যাঁরা ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করবেন, তাঁরা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০.৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ শতাংশ। তবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মুনাফার হার আগের মতোই থাকবে।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ তুলনামূলক নিরাপদ হওয়ায় সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রে আগ্রহী। করোনার সময়েও সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। করের হার বাড়িয়ে, কড়াকড়ি আরোপ করার পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেনি।
সঞ্চয়পত্রের প্রতি ঝুঁকে পড়ার আরেকটি কারণ বিনিয়োগের বিকল্প উপায় না থাকা। শেয়ারবাজার একটি বিকল্প হতে পারত। কিন্তু সেখানে আস্থার সংকট আছে।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে এক শ্রেণির মানুষের উপকার হলেও সরকারের ব্যয় বেড়ে যায়। এতে ব্যাংকিং খাতসহ অভ্যন্তরীণ আর্থিক খাতের ওপর চাপও বাড়ে। আবার এটাও তো ঠিক যে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও সাধারণ মানুষের আস্থা রয়েছে এই বিনিয়োগে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও অবসরভোগীদের জীবন যাপনে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে সঞ্চয়পত্র। মুনাফার হার কমে যাওয়া তাদের জন্য হতাশাজনক হবে। কাজেই বিষয়টি আরেকবার ভেবে দেখা দরকার।