করোনার তাণ্ডব শেষ হয়নি এখনো। এরই মধ্যে নতুন করে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে ফেলে দেওয়া মাস্ক-গ্লাভস-পিপিই ইত্যাদি সামগ্রী। রাজধানী, এর আশপাশের উপনগরীসহ সারা দেশেই যত্রতত্র এসব জমছে। ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া করোনার সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে কী করা হবে, কী করা উচিত, তা নিয়ে না স্বাস্থ্য বিভাগ, না নগর প্রশাসন—কারোরই তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিল বা আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু সমস্যা তো বসে থাকে না। দিনে দিনে তা জমতে থাকে। এখন দেখা যাচ্ছে, ভাগাড়ে তো বটেই, বাড়ির আশপাশে, ফুটপাতে, নর্দমায় পড়ে আছে লাখো পরিত্যক্ত গ্লাভস-মাস্ক। পরিবেশের তীব্র দূষণের কথা না হয় বাদই রইল, এগুলো থেকে অনেকের মধ্যে নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
তাই অবস্থা দাঁড়িয়েছে এমন, করোনা থেকে বাঁচার জন্য না হয় মাস্ক-গ্লাভসের আশ্রয় নেওয়া গেল, কিন্তু মাস্ক-গ্লাভস থেকে আসা সমস্যার সুরাহা কী? এ নিয়ে কথা হয় না কেন? প্রথম আলোর বুধবারের খবরে গাজীপুর শহরে ব্যবহৃত সুরক্ষাসামগ্রীর উপদ্রবের কথা বলা হয়েছে। একই চিত্র সব শহরেই পাওয়া যাবে। দরকার ছিল করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা জনপ্রিয় করার পাশাপাশি ব্যবহারের পর এসবের সৎকারের সদুপায়ের কথাও বলা। দায়িত্বটা যতটা স্বাস্থ্য বিভাগের, ততটাই নগর কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যমেরও। পাশাপাশি পারিবারিক স্তরে, সামাজিক বলয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ববোধের বিষয়টাও প্রত্যাশিত।
মুশকিল হচ্ছে মাস্ক ও গ্লাভসে কেবল করোনার জীবাণুই লেগে থাকতে পারে, এ ভয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও এসব ছুঁতে চান না। এসব থেকে আরও মানুষের আক্রান্ত হওয়ার কথা মনে রেখে দ্রুতই বিহিতের ব্যবস্থা করা দরকার। পথে পড়ে থাকা এসব জিনিস অনেক সময় ভবঘুরে ও পথশিশুরাও সংগ্রহ করে প্লাস্টিক হিসেবে বিক্রি করার জন্য। হস্তশোধনের তরল বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল হলো আরেক আপদ। প্লাস্টিক হওয়ায় তা মাটিতে পচে না, বরং দীর্ঘস্থায়ী দূষণ ঘটায়। এসবই নর্দমা ও জলপ্রবাহে চলে গিয়ে জলাবদ্ধতা ও দূষণ দুটোরই কারণ হয়।
সময় চলে যায়, সমস্যা জমে যায়। তাই এখনই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিত, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো এ সমস্যার স্মার্ট ও সহজ সমাধান সবাইকে জানানো। অন্যদিকে নাগরিকদেরও উচিত, সবকিছুর জন্য সরকারের সহায়তা বা নির্দেশনার অপেক্ষা না করে নিজেরাও সচেতন হওয়া, হাতের কাছে থাকা সমাধান ব্যবহার করা।