বছর তিনেক আগে একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছিল, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখের ওপরে। তাদের একটি বড় অংশই ইয়াবাসেবী। অতিসম্প্রতি কিছু নতুন মাদকের কথা জানা গেছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর এলএসডি নামের মাদকটির নাম এসেছে সামনে। মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে; কিন্তু বন্ধ করা যাচ্ছে না মাদকের চালান।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযানে আটক করা মাদক পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে দেশে প্রতিবছর গড়ে যে দেড় লাখ মাদকদ্রব্যের নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষা হয় তার ৯৫ শতাংশ মাদকদ্রব্য বলে প্রমাণিত। ৫ শতাংশের কম আলামত মাদকদ্রব্য নয় বলে প্রমাণিত হয়।
আর প্রায় ১০ শতাংশ মাদকদ্রব্যের মধ্যে মাদকের উপাদান কম বা ভেজাল পাওয়া যায়। প্রকাশিত খবরে আরো বলা হয়েছে, অ্যামফিটামিন আর ক্যাফেইনের ইয়াবার সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি, চকের গুঁড়া, ট্যালকম পাউডার, গ্লুকোজ, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, স্টিয়ারিক এসিড, ভ্যানিলা পাউডার ও প্যারাফিন মেশানো হচ্ছে।
হেরোইনের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে সার, সোডা, চিনি, স্যাকারিন, নাপাসহ সাদা ট্যাবলেটের গুঁড়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্ষতিকর মাদকে ভেজাল হিসেবে যেসব উপাদান মেশানো হয়, সেগুলো আরো বেশি ক্ষতিকর। এসব ভেজাল উপাদান শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।
সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। নিয়মিত অভিযানে মাদক ধরা পড়ছে; কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না মাদকের চোরাচালান, মাদক প্রতিনিয়ত আসছেই। মাদকাসক্তের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম একেবারেই শহরকেন্দ্রিক। তৃণমূল পর্যায়ে তেমন মাদকবিরোধী প্রচার নেই; কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে মাদক পাওয়া যাচ্ছে এবং অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়ছে। আবার মাদকাসক্তদের সম্পর্কে অভিভাবকদেরও কোনো ধারণা নেই। পারিবারিক বা সামাজিক সচেতনতারও অভাব রয়েছে।
মাদক প্রতিরোধে নতুন ব্যবস্থাও নিতে হবে। এখন কুরিয়ার সার্ভিসেও মাদকের চালান আসছে। বন্ধ করার উপায় কী? অনলাইনে এলএসডি বেচাকেনার খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। তবে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পারিবার ও সমাজের।
মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে সবাইকে সচেতন করতে হবে। মাদক সেবন, মাদকের কারবার গুরুতর অপরাধ। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, সমাজের সর্বত্রই মাদক ঢুকে গেছে। মাদক এমনিতেই ক্ষতিকর। নকল মাদক তো আরো বেশি ক্ষতির কারণ হচ্ছে। কাজেই সব ধরনের কারবার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে মাদক নির্মূল করা হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।