জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নানাভাবেই পড়ছে আমাদের ওপর। সেই সঙ্গে আছে নানা ধরনের অপরিকল্পিত পদক্ষেপ। এরই মধ্যে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, কয়েক বছর ধরে রাজশাহী অঞ্চলে অব্যাহতভাবে নামছে পানির স্তর।
পানির অভাবে গভীর নলকূপ কিংবা সাবমার্সিবল পাম্পও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেখা দিচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। কয়েক দশক ধরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪০ শতাংশেরও বেশি ইউনিয়নে পানিশূন্যতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় খাওয়ার পানির কিংবা জমিতে সেচের পানির সংকট তীব্র।এই সমস্যা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই কমবেশি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। বেশির ভাগ নদীতেই বর্ষার কয়েক মাস ছাড়া পানি থাকে না। খাল, বিল, পুকুরসহ বেশির ভাগ জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বর্ষার সময় বাড়িঘর, ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়।দ্রুতই সেই পানি প্লাবন ঘটিয়ে সাগরে চলে যায়। ফলে বর্ষার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী, খাল-বিল সব শুকিয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি ভূগর্ভে প্রবেশের সুযোগ পায় না। অন্যদিকে কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে।
বর্ষায় খালি হওয়া সেই স্তর আর ভরাট হতে পারছে না। ফলাফল এমন হয়েছে যে অনেক স্থানে এখন গভীর নলকূপেও পানি ওঠে না। এতে মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। আবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও সুপেয় পানির সংকট ক্রমে তীব্র হচ্ছে।ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নোনা পানির অনুপ্রবেশ ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। পানি সংকটাপন্ন এলাকার পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। এতে দেখা যায়, ১৯৮৫ ও ১৯৯০ সালে এ অঞ্চলের গড় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৮ মিটার গভীরে। ২০১০ সালে এই স্তর ১৫ মিটার ছাড়িয়ে যায়।২০২১ সালের মধ্যে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে ১৮ মিটারে বৃদ্ধি পায় এবং কিছু এলাকা যেমন—চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে একটি স্থানে সর্বোচ্চ ৪৬.৮৭ মিটার রেকর্ড করা হয়। এই অবস্থায় অনেক এলাকায় নলকূপেও পানি উঠছে না। পানীয় জলের সংকট যেমন তীব্র হচ্ছে, তেমনি কৃষিকাজও ব্যাহত হচ্ছে।উত্তরাঞ্চলে পানির যে সংকট তৈরি হচ্ছে তার সমাধানে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে হবে। নদী-জলাশয় খনন করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূগর্ভে পানির অনুপ্রবেশ বাড়ানোসহ আরো অনেক পদক্ষেপই জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে।