এরই মধ্যে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত দুই হাজার ৩২৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের।
আগের বছর একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল এক হাজার ৬৬ জন এবং মারা গিয়েছিল ১১ জন। অথচ মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন থেকে যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আবার কীটনাশকের কার্যকারিতা কম থাকা, তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করা এবং প্রয়োগকারীদের দক্ষতার অভাব থাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে সাফল্যও কম।
মঙ্গলবার রাজধানীতে ডেঙ্গুবিষয়ক এক সেমিনারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ব্যবহৃত ছয়টি কীটনাশকের ওপর পরিচালিত গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচটি কীটনাশকের ক্ষেত্রেই মশা প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। একটির কার্যকারিতা থাকলেও প্রয়োগে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করায় এবং প্রয়োগকারীদের অদক্ষতার কারণে ফগিংয়ের মাধ্যমে কীটনাশক ছিটিয়েও মশা মারা যাচ্ছে না।তাহলে সিটি করপোরেশনগুলোর এমন প্রায় অকার্যকর মশা নিধন কর্মসূচি নাগরিকদের নিরাপত্তা কতটা বাড়াতে পারবে? তারা আরো কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করছে না কেন?
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে রেকর্ড বছর ছিল ২০২৩ সাল। সেমিনারে বলা হয়, সরকারি হিসাব মতে ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট দুই লাখ ৪৩ হাজার ৭৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় ৮৫৩ জন। আর কেবল ২০২৩ সালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন, মৃত্যু হয় এক হাজার পাঁচজনের।
সেই রেকর্ড বছরের তুলনায়ও চলতি বছরের এই সময় পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি এবং মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই গুণেরও বেশি। বিজ্ঞানীরা অনেক আগে থেকেই সাবধান করে আসছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের পরিমাণ দ্রুত বাড়বে।
আমরা সেই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা এখন চাক্ষুষ করছি। কিন্তু এর পরও বিপদ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতির এত দুর্বলতা কেন?
ডেঙ্গু ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের সাবধান হতে হবে। পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসনকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। কার্যকর ওষুধ ছিটাতে হবে। মশার বংশবিস্তার রোধে নগরিকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। মশার প্রজননস্থলগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে।