ভাইরাসঘটিত ডেঙ্গুকে একসময় বর্ষাকালের রোগ মনে করা হতো। কয়েক বছর ধরে সারা বছরই ডেঙ্গুর উপদ্রব দেখা যায়। ডেঙ্গুকে অনেকে শহরের কিংবা অভিজাত এলাকার রোগও বলত। এখন সারা শহরে শুধু নয়, গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়।ডেঙ্গুর প্রকৃতি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরের মতো এ বছরও মানুষ ডেন-২ ধরনের ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি হচ্ছে। প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২৩৭ জনের।
একক বছরে মৃত্যুর সংখ্যা বিচারে এটি তৃতীয়। ২০২৩ সালে মারা গিয়েছিল এক হাজার ৭০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জন। বছরের বাকি সময়ে আরো কত মৃত্যু হবে বলা যাবে না। কারণ এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর যথেষ্ট প্রকোপ রয়েছে।গত শুক্রবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪১১ জন।বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশা ও পানিবাহিত রোগব্যাধি বাড়তেই থাকবে। মূলত দুই ধরনের এডিস মশা ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে। অতি সামান্য পানিতেও এরা বংশবিস্তার করতে পারে। নাগরিক অসচেতনতাও ডেঙ্গু বিস্তারের জন্য অনেকাংশে দায়ী।২০১৬ সাল থেকে সারা বছরই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর অনুপাত একই রয়ে গেছে। তা হচ্ছে মূলত ডেন-২ ধরনের কারণে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সীমিতসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ রোগী ডেঙ্গুর ধরন ডেন-২-এ আক্রান্ত হয়েছে। ২০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে ডেন-৩-এ এবং ১০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে ডেন-৪-এ। এদিকে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীর কারণ বিশ্লেষণ করে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল জানিয়েছে, বেশির ভাগের মৃত্যু হচ্ছে শক সিনড্রোমে।বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে বেশ কিছু নির্দেশনা ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছিল। সেসব নির্দেশনা যথাযথভাবে মানা হয়নি। আমরা মনে করি, মশা নিধনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সারা বছরই ক্রাশ প্রগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।