রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রাজধানীর পরই ডেঙ্গু রোগী বেশি বাড়ছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায়। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৯৩৩ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি ছিল ৭৭০ জন।
সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। কারণ এ সময় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। এই মশা সচরাচর পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। বর্ষায় যেখানে-সেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে এবং খুব সামান্য পানিতেই এই মশা বংশবিস্তার করতে পারে। নাগরিক সচেতনতার অভাব থাকায় মানুষ যত্রতত্র পলিথিনের ব্যাগ, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে।
সেগুলোতে জমা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা অনায়াসে বংশবিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া অনেক বাড়ির ছাদে, বারান্দায় ফুলের টব রাখা হয় এবং সেগুলোতে পানি জমে থাকে। অনেকের ঘরেও ছোটখাটো পাত্রে পানি জমে থাকে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়। আর দুই বাড়ির মধ্যখানে সরু জায়গায় রীতিমতো আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। অনেক বাড়ির সানসেটেও আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায়। এসব জায়গায় এডিস মশার বংশবিস্তার দ্রুততর হয়। ফলে বর্ষায় দ্রুত এডিস মশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি দেখা যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩৫০ শতাংশের বেশি। গত বছর প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) ১০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। বিপরীতে চলতি বছর শুধু মে মাসেই ১৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর একসঙ্গে এত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনা গত বছর কোনো মাসেই ছিল না। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে এ বছর ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। অনেক হাসপাতালেই ডেঙ্গুর জন্য বরাদ্দ থাকা শয্যাসংখ্যার চেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী অবস্থান করছে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রথমেই এডিস মশা নিধনে অভিযান জোরদার করতে হবে। আর যেহেতু ঢাকায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি, তাই এ কাজটিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। পাশাপাশি মানুষকেও আরো সতর্ক হতে হবে এবং নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা কিংবা বাড়িঘরের কোথাও কোনো পাত্রে এক দিনের বেশি পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। মশারি ব্যবহার, ইনসেক্ট রিপেলেন্ট স্প্রে বা অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করে মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে। মশক নিধন অভিযানের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টিরও উদ্যোগ নিতে হবে।