মশার যন্ত্রণায় নগরবাসী রীতিমতো অতিষ্ঠ। রাস্তায় মশারি টানিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মানববন্ধন বা অন্যান্য কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মশা নিধনে ব্যাপক কর্মসূচি পরিচালনা করছে, চলবে আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত। তবে এই কর্মসূচি মশা নিধনে তেমন কাজে আসছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ডিএনসিসির মেয়র মশা নিধনে ব্যর্থতার জন্য কাউন্সিলরদেরও কিছু দায় আছে বলে স্বীকার করেছেন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মশা নিয়ন্ত্রণে সাত দিন সময় নিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, এর মধ্যে মশার উপদ্রব অনেকটাই কমে আসবে। অন্যদিকে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার উৎপাত শুরু হয় মূলত এপ্রিল মাসে। এর মধ্যে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে গত শনিবার। এখন থেকে মাঝেমধ্যেই কিছু বৃষ্টি হবে। এতে কিউলেক্স মশার উৎপাত কিছুটা হয়তো কমবে; কিন্তু বাড়বে এডিসের বংশবিস্তার। তাই মশক নিধনে নিয়মিত অভিযান আরো জোরদার করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। এ জন্য বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই বেশি দায়ী করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ পানি ও কীট-পতঙ্গবাহিত রোগ ক্রমেই বাড়বে।
বাস্তবে দেখাও যাচ্ছে তাই। সিঙ্গাপুর আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত দেশ। তাদের পরিবেশ রক্ষা ও মশা নিধনব্যবস্থা আমাদের তুলনায় অনেক ভালো। তা সত্ত্বেও ২০২০ সালে বাংলাদেশের তুলনায় সিঙ্গাপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ছিল অনেক বেশি। জলবায়ুর পরিবর্তন আমরা রোধ করতে পারব না। কিন্তু আমরা মশা নিধনে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি। শুধু সিটি করপোরেশন সেটি কখনোই করতে পারবে না, যদি না নাগরিকরা সচেতনভাবে সহযোগিতা করেন।
ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস প্রজাতির মশা। এ মশা নালা-নর্দমার নোংরা পানিতে নয়, স্বচ্ছ পানিতে বংশবিস্তার করে। সাধারণত বাড়ির আশপাশে ফেলে রাখা পরিত্যক্ত জিনিস (টায়ার, ডাবের খোসা, আইসক্রিম বা দইয়ের পাত্র কিংবা অন্যান্য জিনিস, যেগুলোতে বৃষ্টির পানি জমতে পারে) এবং ঘরের ভেতরে জমিয়ে রাখা পানি বা ফ্রিজের পেছনে, ফুলের টব ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিতেই এডিস মশা বংশবিস্তার করে।
ডেঙ্গু নিয়ে এত হৈচৈয়ের পরও সিটি করপোরেশনগুলোর অভিযানে বহু বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। দেখা যায়, ৫০ শতাংশের বেশি বাড়িতে মশা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। মশক নিধন কর্মীদের ঘরের ভেতরে কিংবা অন্য অনেক জায়গায় প্রবেশাধিকার থাকে না। ফলে এডিস মশা নিধন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মানুষকেই আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে কয়েক দিনের অভিযান পরিচালনা করে খুব বেশি লাভ হবে না। সারা বছরই মশা নিধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।