করোনা মহামারি নিয়ে দেশের মানুষ যখন চরম উদ্বেগে, হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঠাঁই নেই অবস্থা, তখন আরেক বিপদ হয়ে এসেছে ডেঙ্গু। দেশে এরই মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সাত হাজার ৪৭২ জন এবং মারা গেছে ৩১ জন। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। জানা যায়, চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১৯ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে চার হাজার ৮১৪ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে করোনায় শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার কিছুটা কম থাকলেও ডেঙ্গুতে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে অভিভাবকদের উৎকণ্ঠাও চরমে পৌঁছেছে।
এডিস মশা ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়ায়। প্রতিবছরই বর্ষায় এডিস মশা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। এ জন্য বর্ষা আসার আগে থেকেই মশা নিধনে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হয়। এ বছর মশার ব্যাপক বৃদ্ধির জন্য সিটি করপোরেশনগুলোর মশক নিধন অভিযানের স্বল্পতা যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী মানুষের অসচেতনতা। এডিস মশা সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, আইসক্রিম বা অন্যান্য পণ্যের পরিত্যক্ত কৌটা, এমনকি প্লাস্টিক ব্যাগের ভাঁজে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতেও এই মশা ডিম দিয়ে থাকে।
এ ছাড়া ফুলের টব, ড্রাম, বালতি বা অন্যান্য পাত্রে জমানো পানিতেও এই মশা বংশ বিস্তার করে। ঢাকা শহরে দুই বাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে, সানসেড, কার্নিশেও ময়লার সঙ্গে এমন ছোটখাটো বহু কৌটা জমে থাকে। বহু নির্মাণাধীন বাড়িতে জমে থাকা পানিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। নিজেরা উদ্যোগী হয়ে এসব পরিষ্কার না করলে সিটি করপোরেশন কর্মীদের পক্ষে সব কিছু পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে আমাদের নিজ বাড়ির আশপাশ অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে।
এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৪৮ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছিল এক লাখেরও বেশি মানুষ। এ বছর আরো অন্তত তিন মাস ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক আকারে থাকতে পারে। তাই এখনই এডিস মশা নিধনে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে এবং মানুষকে আরো বেশি সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। তা না হলে এ বছরও ডেঙ্গুতে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের বেশ কিছু এলাকায়, বিশেষ করে নিচু এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব অনেক বেশি পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলোতে মশক নিধনে বড় ধরনের অভিযান চালাতে হবে।
পাশাপাশি এসব এলাকার মানুষকে সচেতন করার জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও আরো জোরদার করতে হবে। আমরা চাই না, ডেঙ্গুও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ুক।