ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর। দলবদ্ধ এই অপরাধীচক্র ‘কিশোর গ্যাং’ নামে পরিচিত। উদ্ভট নাম নিয়ে গড়ে ওঠা এসব দলের সদস্যদের অনেকেই স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হয়নি। পাড়া-মহল্লায় এরা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা তৎপর।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর ফরাশগঞ্জে এমনই এক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে খুন হয়েছে আরেক কিশোর। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পুরান ঢাকার ওয়ারী, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া ও ফরাশগঞ্জ ঘুরে জানা যায়, লালকুঠি ঘাটে সন্ধ্যার পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা থেকে কিশোররা এসে আড্ডা দেয়। ফুটপাতের দোকান থেকে খেয়ে টাকা না দেওয়াটা তাদের নিয়মিত বিষয়। লঞ্চ থেকে যাত্রী নামতে শুরু করলে ধাক্কাধাক্কি করাটাও তাদের রুটিন কাজ। পুলিশের ক্রাইম অ্যানালিসিস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।
কিশোর গ্যাং গোষ্ঠীগুলো তৈরি হলো কেন? কেনই বা তারা এত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারকাখ্যাতি, হিরোইজম, ক্ষমতা, বয়সের অপরিপক্বতা, অর্থলোভ, শিক্ষাব্যবস্থার ঝুঁকি এবং পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়ায় তাদের সামাজিকীকরণ ও মানসিক বিকাশ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে সমাজের বিভিন্ন গ্যাং কালচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে কিশোররা।
সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় যে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজে নানা অসংগতি রয়েছে। নিজেদের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কিশোররা। তাদের আচরণে পরিবর্তন হচ্ছে। কিশোর বয়সে হিরোইজম ভাব থাকে। আবার কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘গ্যাং কালচার’ গড়ে উঠছে। কিশোর বয়সে ইতিবাচক চর্চার দিকে না গিয়ে নেতিবাচক চর্চার দিকে চলে যায়।
সমাজ বাস্তবতার দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখন এলাকাভিত্তিক সামাজিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না, খেলার মাঠ কমে এসেছে। সামাজিকভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকায় কিশোররা সাইবারজগতে ঢুকছে। অপরাধ ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবার ও সামাজিক পর্যায়ে সঠিক পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ কিশোর অপরাধ কমাতে অনেক সাহায্য করবে। সেই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কঠোর হতে হবে।