দেশে খুনাখুনির যত ঘটনা ঘটে তার একটি বড় অংশের কারণ ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ। জমিজমার বিরোধ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চালাতে গিয়েও বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। আর এই বিরোধ নিরসনে যাদের ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়ে থাকে তারাই ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ আরো উসকে দেয়।
অভিযোগ আছে, অবৈধ আয়ের জন্য তারা বিরোধ জিইয়ে রাখে। অর্থের বিনিময়ে একজনের জমি আরেকজনের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার অভিযোগও কম নয়। এসব কারণে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
কিন্তু সেই কাজের অগ্রগতিও খুবই মন্থর। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তার মধ্যে আছে, ভূমি সংস্কার বোর্ডকে ভূমি ব্যবস্থাপনা বোর্ডে রূপান্তর। এসংক্রান্ত আইনেরও সংস্কার করা হবে। বাড়ানো হবে ডিজিটাল সেবার পরিধি। একই সঙ্গে শক্তিশালী করা হবে বোর্ডের জনবল কাঠামো ও অন্যান্য সেবা।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা থাকলে কিংবা অস্বচ্ছতা থাকলে তার প্রধান শিকার হয় দুর্বল, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষজন। সবলেরা নানাভাবে তাদের প্রতারিত করে। তাদের সামান্য যেটুকু জমি থাকে তা-ও কেড়ে নেওয়া হয়।
ভূমি অফিসের কর্তাব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তারা কোনো প্রতিকার পায় না। আর জমিজমা নিয়ে বিরোধে খুনাখুনির ঘটনা তো ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রধান উপায় হচ্ছে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করা।
সারা দেশের ভূমিসংক্রান্ত সব রেকর্ড ও কর্মকাণ্ডকে ডিজিটালাইজ করা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই ডিজিটালাইজেশনকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। বলা হয়ে থাকে, অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার কারণেই তা সঠিকভাবে এগোতে পারছে না।
এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতেই হবে। অন্যদিকে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজ হওয়ায় ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারকির প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। কিন্তু বর্তমান বোর্ডের ডিজিটাল তদারকির সক্ষমতা অনেক কম।
সে কারণেও ভূমি সংস্কার বোর্ডের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ভূমি সংস্কার বোর্ড আইন-১৯৮৯-এর বদলে ভূমি ব্যবস্থাপনা বোর্ড আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন পরিবর্তনের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক অনুমোদনও দিয়েছেন।
জানা যায়, সংশোধিত আইনে বোর্ডের জনবল কাঠামো, লজিস্টিক সাপোর্ট, ক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগসহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখন আইনটি দ্রুত প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।