শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জনের প্রাণহানির খবর প্রকাশিত হয়েছে । এসব দুর্ঘটনার কারণ হলো চালকদের বেপরোয়া গাড়িচালনা। ওই দিনের সবচেয়ে ভয়ংকর দুর্ঘটনা ছিল একটি বাস পরপর তিনটি যানবাহনকে চাপা দেওয়ার ফলে ছয়জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু। দুর্ঘটনাকবলিত বাহনগুলো হলো মোটরসাইকেল, আলমসাধু ও রিকশাভ্যান।
ঢাকা-চুয়াডাঙ্গাগামী রয়েল এক্সপ্রেস পরিবহনের ওই বাসের চালক আসাদুল হক টানা ১৭ ঘণ্টা স্টিয়ারিংয়ে ছিলেন, সংবাদমাধ্যমে এমন খবর এসেছে। পত্রিকার খবরে বলা হয়, রয়েল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক সকাল সাড়ে নয়টায় চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকার পথে রওনা দেন এবং রাত সাড়ে আটটায় ঢাকায় পৌঁছান। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেন। ঢাকা-চুয়াডাঙ্গা পথে আসা–যাওয়ায় তাঁর ১৭ ঘণ্টা সময় লেগেছে। মাঝখানে মাত্র দুই ঘণ্টা বিশ্রামের সময় পেয়েছেন তিনি। একজন চালক টানা ১৭ ঘণ্টা বাস চালালে তাঁর পক্ষে বাস নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। আমাদের বেশির ভাগ মহাসড়কে এখনো ডিভাইডার নেই। এ অবস্থায় চালকদের সড়কের এক পাশে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হয়। কিন্তু অনেক চালকই তা মানেন না। এই দুর্ঘটনার দুই দিন আগে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে সাইকেলে যাচ্ছিলেন পর্বতারোহী রেশমা নাহার। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি গাড়ি তাঁকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি সম্ভাবনাময় জীবন।
সড়কে বেপরোয়া যানবাহন চলাচলের কারণে যে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, তার প্রতিকার কী? ২০১৮ সালে বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজশিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের দাবির মুখে সরকার সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনও করে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তার মধ্যে একটি ছিল দূরপাল্লার বাসযাত্রায় বিকল্প চালক রাখা এবং পাঁচ ঘণ্টা পরপর চালক পরিবর্তন করা। চালক ও সাহকারীদের প্রশিক্ষণ, চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক, মহাসড়কের পাশে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার এবং সিগন্যাল মেনে চলার কথাও বলেছিলেন তিনি।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ‘সকলই গড়ল ভেল’। বহু বছর ধরেই শ্রমিক ইউনিয়ন নামধারী একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিবহন খাতকে জিম্মি করে রেখেছে। এদের দৌরাত্ম্য কমাতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কিংবা সড়ক পরিবহন আইন—কোনোটিই বাস্তবায়ন করা যাবে না। সড়কে আর কত প্রাণ ঝরলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে?