বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও লোভনীয় প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম (পিএসএস) প্রতিস্থাপনের কাজ বিতর্কিত কোম্পানি অ্যামাডিউসকে দেওয়ার পাঁয়তারা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অভিযোগ উঠেছে, বিমানের মার্কেটিং বিভাগের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট অ্যামাডিউসকে কার্যাদেশ দেওয়ার জন্য এমনভাবে দরপত্র তৈরি করেছে, যাতে অন্য কেউ কাজটি না পায়। শুধু তাই নয়, এ লক্ষ্যে বিমানের টেকনিক্যাল টিমের দক্ষ সদস্যদের কৌশলে অন্যত্র বদলির পাশাপাশি নানারকম অনিয়ম ও কৌশলেরও আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
উদ্বেগজনক হলো, এ সিন্ডিকেটের অসাধু তৎপরতা সফল করতে টেকনিক্যাল টিমের সুপারিশ পুরোপুরি উপেক্ষা করে অ্যামাডিউস সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদনের জন্য আজ পরিচালনা পর্যদের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের শক্ত অবস্থান নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।
এর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সব সেক্টরে গেড়ে বসা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছিল। তবে দুর্নীতিবাজ চক্রের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটির মুক্তি যে ঘটেনি, একটি বিতর্কিত কোম্পানিকে শতকোটি টাকার কাজ পাইয়ে দেওয়ার উদ্যোগের মাধ্যমে এ সত্যই পরিস্ফুট হয়েছে। বস্তুত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। বিমানকে দুর্নীতির অভয়ারণ্য বললেও অত্যুক্তি হয় না। সম্ভাবনাময় সংস্থাটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে মূলত সেখানে চলমান বল্গাহীন দুর্নীতির কারণেই।
আধুনিক কৌশল প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করে অর্থ ও সুনাম অর্জনের কাজটি সহজসাধ্য হলেও বর্তমানে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে। কেবল মার্কেটিং বিভাগ নয়, বিমানের প্রায় প্রতিটি শাখায় দুর্নীতির বিস্তার লক্ষ করা যায়। হতাশার বিষয় হলো, খোদ প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারি সত্ত্বেও বিমানে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা যায়নি। বছরের পর বছর ধরে নানারকম কারসাজি ও ফন্দি-ফিকিরের মাধ্যমে প্রায় প্রকাশ্যে সিন্ডিকেট গঠন করে সংস্থাটিতে কমিশন বাণিজ্যসহ দুর্নীতি ও অপরাধ চালানো হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্র কেবল যে আর্থিকভাবেই লাভবান হতে পারে তাই নয়, একইসঙ্গে সংস্থাটি দেশের মর্যাদা বহির্বিশ্বে সমুন্নত করতে পারে। কাজেই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে যাতে দেশবাসী অহংকার করতে পারে, সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি আর এজন্য সর্বপ্রথম একে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতির যাবতীয় তথ্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করে সংস্থাটিকে ঢেলে সাজানো উচিত।
এ লক্ষ্যে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম (পিএসএস) প্রতিস্থাপনের কার্যাদেশ দেওয়া জরুরি। সব ধরনের দুর্নীতি থেকে মুক্ত হয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে, এটাই প্রত্যাশা।