English

21 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
- Advertisement -

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব: বাড়তি খরচের সক্ষমতা জনগণের নেই

- Advertisements -

সাধারণ মানুষ যাতে আপত্তি তুলতে না পারে, সে জন্য সরকার একটি অলিখিত নীতি চালু করেছে। প্রথমে তারা গ্যাস-বিদ্যুতের পাইকারি দাম নির্ধারণ করে, পরে ভোক্তা পর্যায়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গত রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি হয়। প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ ব্যবহারে খরচ বাড়তে পারে ১ টাকা ১০ পয়সা। প্রথম অধিবেশনে ছয়টি বিতরণ কোম্পানি ও একটি সঞ্চালন কোম্পানি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব উপস্থাপন করে। তারা বলছে, পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছে গত ডিসেম্বরে।

এখন খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হলে লোকসানে পড়বে তারা। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যোক্তারা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বিদ্যুৎ খাতে চুরি, অপচয় ও কমিশন বাণিজ্য বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন। একজন জ্বালানি-বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলোর দেওয়া হিসাবের যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

বিইআরসির কারিগরি কমিটি বলেছে, বিতরণ সংস্থার মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পিডিবি, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ক্ষেত্রে কিছু মুনাফা ধরে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হয়। আর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ক্ষেত্রে মুনাফা ধরা হয় না।

গত ১৪ বছরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ বার। এখন খুচরা পর্যায়ে ১১তম বারের মতো দাম বাড়তে পারে এ মাসে। শুনানি-পরবর্তী মতামত জানতে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শুনানির পর ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে বিদ্যুতের দাম ঘোষণার বাধ্যবাধকতা আছে। তবে এ মাসেই আদেশ ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিইআরসি।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, সে সময় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেন, ‘এখন দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। অনেক দিন ধরে আমরা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে আছি। সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমছে।

বিদ্যুতের দাম বাড়ালে মূল্যস্ফীতি আবার বাড়বে।’ অন্যদিকে শিল্পোদ্যোক্তা শেখ মাসাদুল আলম মনে করেন, বিদ্যুৎ-সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়লে শিল্প খাত আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে এই খাতে যে অপচয় ও কমিশন বাণিজ্য চলছে, তা বন্ধের দাবি জানান। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) পক্ষে জ্বালানি-বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম ৫৩টি লিখিত প্রশ্ন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জবাব দিতে পারেননি।

বিইআরসি এমন সময় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের দাম কমলে অভ্যন্তরীণ বাজারেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে ক্ষেত্রে সরকার যে পরিমাণ লোকসানের দোহাই দিচ্ছে, তা-ও কমে আসবে।

সে ক্ষেত্রে কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে এ যুক্তিতে ভোক্তা পর্যায়ে এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। বরং সরকারের উচিত হবে বিদ্যুৎ খাতে চুরি-অপচয় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। সরকারের এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে অর্থনীতি আরও ঝুঁকিতে পড়ে এবং মূল্যস্ফীতিতে পিষ্ট মানুষ চিড়েচ্যাপটা হয়।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন