দেশ তথ্য-প্রযুক্তিতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। শহরের সীমা ছাড়িয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সেবা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ তার প্রভূত সুফলও পাচ্ছে। ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। দেশে-বিদেশে নানা রকম যোগাযোগ হচ্ছে। বহু তরুণ-তরুণীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে তারা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ই-কমার্সের সুবিধা ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এত বিপুল সুবিধার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। ক্রমেই সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। অথচ এজাতীয় অপরাধ দমনে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর রয়েছে সীমাহীন দুর্বলতা।
ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণার ফাঁদ পাতার মতো সামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে মানবপাচার, মাদক বেচাকেনা, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মতো অনেক অপরাধই ঘটে থাকে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে। শুক্রবার প্রকাশিত সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের ‘সাইবার ক্রাইম ট্রেন্ড ইন বাংলাদেশ-২০২০’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন অনেক তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে দেশে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সমান্তরাল হারে বেড়েছে সাইবার অপরাধ। ফেসবুক, ইউটিউব, লাইকি, টিকটক, বিগো লাইভের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দ্রুত বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধ।
এসব অপরাধের মধ্যে আছে যৌন হয়রানিমূলক একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও (পর্নোগ্রাফি) ব্যবহার করে হয়রানি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা, এটিএম হ্যাকিং ও ই-কমার্সের নামে প্রতারণা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ক্রমে বেশি করে মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হলেও তারা পুলিশের সহযোগিতা নিতে আগ্রহ হারাচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে অনেকেই জানিয়েছেন, অভিযোগ করেও বিশেষ লাভ হয় না। প্রতিকার পাওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই কম। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের কাছে গিয়েও ভুক্তভোগীরা কেন প্রতিকার পায় না কিংবা সন্তুষ্ট হতে পারে না, তার কারণগুলো জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
তথ্য-প্রযুক্তি যত এগোবে, এর অপব্যবহার কিংবা প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ ততই বাড়বে। তাই তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমনে আমাদের আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে।
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী সাইবার স্কোয়াড গড়ে তুলতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা যেহেতু গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে যাচ্ছে, তাই সারা দেশের থানা পর্যায়ে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে।