মাদকের প্রভাব কমানো যাচ্ছে না। বরং এর প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মাদকের উপকরণে বদল ঘটছে। মাদকদ্রব্যবিরোধী ‘মহাযুদ্ধের পর’ গণমাধ্যমের খবর উল্টো দৃশ্যই তুলে ধরছে। বছর দুয়েক আগে ইয়াবাবিরোধী অভিযানের পর পত্রিকার খবরেই বলা হয়েছিল ইয়াবার চালান আরো বেড়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞই তখন বলেছিলেন, মাদকবিরোধী অভিযানের অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিল না। তার কারণেই সমস্যাগুলো হচ্ছে—মাদক না কমে বরং পরিমাণে ও উপকরণে বাড়ছে।
ঘাগটিয়া গাজীপুরের কাপাসিয়ার ছোট্ট গ্রামীণ জনপদ। সেখানে পড়েছে মাদকের ছোবল। ইয়াবাই সেখানকার মূল মাদক। এলাকাটির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের পেশা চাষাবাদ। এক দশকের ব্যবধানে সেই জনপদ এখন মাদকের ছোবলে নীল। ঘাগটিয়ায় এখন সন্ধ্যা নামে মাদকের আসরকে সঙ্গী করে। মাঠঘাটে, পুকুরপারে, নির্জন গাছতলায়, এমনকি সড়কের পাশে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের কারবার।
কারবারিদের কেউ কেউ বিভিন্ন স্থানে বানিয়েছে ঘর, যেখানে বসে মাদকের আসর। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী একবার একটি ‘মাদকঘর’ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তার পরও দমে যায়নি মাদক কারবারিরা। তাদের হামলায় কেউ আহত হয়েছেন; কেউ শিকার হয়েছেন সাজানো মামলার, কাউকে দেওয়া হয় প্রকাশ্য মৃত্যু পরোয়ানা। এলাকার মানুষের মুখ কুলুপ আঁটা। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে এখন ভুলেও কেউ কথা বলে না।
ঘাগটিয়া এলাকার প্রায় সবাই বলে, ‘মাদক সব শেষ কইরা দিছে।’ কিন্তু মাদক কারবারিদের নাম কেউ প্রকাশ করতে চায় না। জানতে চাইলে বলে, ‘ঘুইরা দেহেন, জানতে পারবেন।’ জানা গেছে, খুচরা কারবারি অনেকজন রয়েছে, তবে নিয়ন্ত্রণ ও পাইকারি কারবারে জড়িত মাত্র কয়েকজন। সবাই প্রভাবশালী। একজনের সঙ্গে সরকারি রাজনীতির সংযোগ রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে অনেক চেষ্টা করছি। পেরে উঠছি না। দিন দিন মাদকের বিস্তার ঘটছে। খুবই অসহায় আমরা।’ ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি বলেছেন, ‘প্রতিবাদ করে দোষী হয়েছি। মাদক কারবারিরা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। থানায় জানিয়েছি, ফল পাইনি।’
ঘাগটিয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে আলোচিত মাদকদ্রব্য হলো ইয়াবা। ঘাগটিয়া ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডে গ্রাম রয়েছে ২৩টি। জনসংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি। গড়ে পাঁচ পরিবারের মধ্যে একটিতে একজন মাদকাসক্ত রয়েছে। মাদকাসক্তের বেশির ভাগের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ইয়াবা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য রয়েছে। পুলিশের হিসাবে কাপাসিয়ায় মাদক কারবারি ২৭০ জন। ২৪৬ জনই ইয়াবা কারবারি। আর ঘাগটিয়া ইউনিয়নে কারবারি ৩৪ জন। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। নতুন এবং কার্যকর প্রক্রিয়ায় মাদকের কারবারবিরোধী অভিযান চালাতে হবে। ফলপ্রসূ কিছু করতে গেলে সে ব্যবস্থা নেওয়াই উত্তম।