আজ সোমবার আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন। এবার সময় আর বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান। এর আগে প্রতিবছর আয়কর মেলা হয়েছে। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে আয়কর মেলার আয়োজন করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে করদাতাদের সুবিধায় প্রতিটি কর অঞ্চলে মেলার মতো পরিবেশ বজায় রেখে আয়কর রিটার্ন জমাসহ রাজস্ব সেবা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে। মেলার সব সুযোগ-সুবিধাই মিলেছে কর অঞ্চলগুলোতে।
প্রশ্ন হচ্ছে—কারা কর দেবেন? কোনো ব্যক্তি করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়; মহিলা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয়; গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় তাহলে তাঁরা করের আওতায় পড়বেন। সাধারণ মানুষ আয়কর দিতে চায়। চাকরিজীবীদের তো আয়কর ফাঁকি দেওয়ার উপায়ই নেই। বছরে তিন লাখ টাকার সামান্য আয়ে সংসার চলুক আর না চলুক, আয়কর প্রদান বাধ্যতামূলক। তার পরও আয়করদাতার সংখ্যা বাড়ছে না। কর আদায়ও হতাশাজনক।
এখন পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশের কিছু বেশি মানুষের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা টিআইএন আছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এর মধ্যে অর্ধেক টিআইএনধারীই রিটার্ন জমা দেন না। রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, দেশে টিআইএন আছে প্রায় ৪৫ লাখ নাগরিকের। কিন্তু বছর শেষে আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেন ২০ লাখ থেকে ২২ লাখ। তাঁদের মধ্যে সাত লাখ থেকে আট লাখ আবার সরকারি কর্মকর্তা। অন্যদিকে যাঁরা বছর শেষে রিটার্ন জমা দেন, তাঁদের প্রায় ১০ শতাংশ শূন্য রিটার্ন জমা দেন।
অর্থাৎ এই ১০ শতাংশ করের আওতায় পড়ে না। সেই হিসাবে দেশে আয়কর দেন ১ শতাংশেরও কম মানুষ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে জিডিপির তুলনায় কর আহরণে বাংলাদেশ রয়েছে সপ্তম স্থানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করযোগ্য আয় থাকলেও কর না দেওয়া, দিলেও ন্যায্য পরিমাণে না দেওয়া, এনবিআরের নানা সীমাবদ্ধতা, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কর না দেওয়া এবং বড় প্রকল্পগুলোর জন্য কর মওকুফ নীতি—এই চার কারণে দেশ জিডিপির তুলনায় কর আদায়ে পিছিয়ে রয়েছে।
আয়কর আদায়ের দুর্বলতা ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে সক্ষম ও অতি সক্ষমদের কাছ থেকে আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআরকে আরো তৎপর হতে হবে। কর দেওয়ার সঙ্গে তা আদায়ে রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা ও ব্যক্তির সততা—দুটিই সংশ্লিষ্ট।
করের আওতা নির্ধারণ করে কারা এই আওতায় পড়ে তাদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। জাতীয় সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আরো গতিশীল করার স্বার্থেই দেশের কর ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হওয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করি, এনবিআর সেই লক্ষ্যে কর আদায়ে আরো দক্ষতার পরিচয় দেবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন