করোনাভাইরাস মহামারিতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হওয়ায় দেখা দিয়েছে আর্থিক অনিশ্চয়তা। সেই সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়ে গেছে। এমনকি নিজের গৃহও এখন নারী ও শিশুকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর জরিপ ও সরকারি তথ্যও বলছে, করোনাকালে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। এই সময়ে নির্যাতনের ধরনে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি বেড়েছে পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও ধর্ষণের মতো ঘটনা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনায় অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে হতাশা ও অস্থিরতা বোধ করায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহিংস আচরণ বেড়েছে, যা করোনা পরিস্থিতির আগের চেয়ে বেশি। আর্থিক সংকট, অনিশ্চয়তা ও মানসিক অশান্তির কারণে বাল্যবিয়ে ও বিয়েবিচ্ছেদ বেড়েছে বলে মহিলা পরিষদ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপপরিষদ বলছে, ২০২০ সালে নভেম্বর মাসের শিশু নির্যাতন উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে মোট ৩৫৩ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক বলছে, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ২৪ শতাংশ। ২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে বাল্যবিয়ে বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন প্রকাশিত তথ্যে বলা হচ্ছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ৩৭ হাজার ৯১২ জন নারী ও শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
করোনাকালে ধর্ষণ, বাল্যবিয়ে ও মানসিক চাপ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে যাওয়া অবশ্যই উদ্বেগজনক। দেশে আইন আছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে, কিন্তু তার পরও যখন করোনায় পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে যায়, তখন তার কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। বিষয়টি কি এ রকম যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে? নাকি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছে যে করোনার মতো মহামারিতেও ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে? যুগোপযোগী করে নারী নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না কেন?
আমাদের সমাজবিজ্ঞানীরা নিশ্চয় এসব বিষয় নিয়ে ভাববেন। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক শক্তির পাশাপাশি তবে সবার আগে এসব অপরাধ দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরো তৎপর হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন