বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ এখনো অতি সামান্য। এর প্রধান কারণ অতীতে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ না থাকা। অথচ মৌসুমে অনেক কৃষিপণ্য পচে নষ্ট হয়। বর্তমান সরকার পণ্য সংরক্ষণ ও পণ্য রপ্তানিতে কিছু সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। আর এই খাতের ব্যবসায়ীদের যুগোপযোগী উদ্যোগে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। গত চার বছরে এই খাতে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী তিন বছরের মধ্যে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রপ্তানি আয়ের দিক থেকে তৈরি পোশাক খাতের পরেই স্থান হতে পারে কৃষি খাতের।
কৃষিপণ্য রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশসহ বর্তমানে ১৪৪টি দেশে বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়। একই সঙ্গে বাড়ছে রপ্তানীকৃত পণ্যের তালিকাও। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৫ কোটি ডলারের। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ১০৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই (জুলাই-আগস্ট) কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে ২১ কোটি ডলারের।
গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। সেই হিসাবে বছর শেষে এই খাতের রপ্তানি আয় ১২৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে ব্যবসায়ীরা তিন বছরে বাজার ছয় গুণ করার যে সম্ভাবনা দেখছেন, তা মোটেও অবাস্তব নয়। এ জন্য সরকারকে নীতি সহায়তা জোরদার করতে হবে। পুঁজির জোগান নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পথে উন্নততর পরিবহন সুবিধা বাড়াতে হবে। রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের যে তালিকা রয়েছে, তা এখনো খুবই সংকীর্ণ। একে সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে এবং তা করতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে। বিভিন্ন দেশে এখনো শুল্ক-অশুল্ক যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর ওপর আরো বেশি জোর দিতে হবে।
উন্নত দেশগুলো কৃষিজাত খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক থাকে। এ কারণে তারা পণ্যের আন্তর্জাতিক মান সনদের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কৃষিপণ্য উৎপাদনেও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। অনেক কৃষিপণ্যে দ্রুত পচন ধরে এবং জীবাণুর দ্রুত বংশবৃদ্ধি হয়। দেশব্যাপী সেসব পণ্যের সঠিক সংরক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একইভাবে পচনরোধী পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানিতে যে গতি এসেছে, উত্তরোত্তর তা আরো শক্তিশালী হবে। এতে দেশ যেমন সমৃদ্ধ হবে, দেশের কৃষকরাও লাভবান হবে।