দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এসব এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধি-নিষেধ বা লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কোনো কোনোটির লকডাউন বাড়ানো হয়েছে দ্বিতীয় মেয়াদে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন জনপ্রতিনিধিরা। পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোথাও ব্যারিকেড বসিয়ে, কোথাও মাইকিং করে অকারণে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে মানুষকে। জনসচেতনতা বাড়াতে কোথাও কোথাও বিলি করা হচ্ছে লিফলেট।
তবু নানা অজুহাতে মানুষ ঘরের বাইরে আসছে। মাস্ক ব্যবহার করছে না। ফলে দেশজুড়েই দৈনিক শনাক্তে আবার দেখা যাচ্ছে ঊর্ধ্বগতি। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। সীমান্তের কোথাও কোথাও দৈনিক শনাক্তের হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দিকে আরো আগে থেকেই নজর রাখা উচিত ছিল। বিশেষ করে যখন পাশের দেশে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বেড়ে যায় তখনই যদি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপকভাবে টিকা দেওয়া যেত, তবে হয়তো এখন ওই সব এলাকায় এত সংক্রমণ না-ও হতে পারত।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এখন সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে জরুরি টিকাদান কার্যক্রম চালানো দরকার বলে মত দিলেও এ ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে বলে খবরে প্রকাশ। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, এখন যেসব এলাকায় সংক্রমণ তুলনামূলক কম আছে, সেই এলাকাগুলোতে টিকা দেওয়া গেলে বেশি উপকার হবে, সেখানে সংক্রমণ ছড়াতে পারবে না।
সীমান্তবর্তী এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, যেসব সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই সেসব স্থান দিয়ে অবাধে চলাচল। এই চলাচল সীমান্ত এলাকায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ালেও বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ খুব একটা সচেতন বলে মনে হয় না। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে গোপনে বাংলাদেশিদের ভারতে যাতায়াত বেড়েছে। ফলে সীমান্ত এলাকাসহ দেশের অভ্যন্তরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে অবৈধ প্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকের অভিযোগ, মাদক চোরাকারবারিদের অবাধ যাতায়াত ও মাদকপাচার কারবার আগের মতোই চলমান। ভারতীয় নাগরিকদের চলাচলও সীমান্ত এলাকায় বাড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের কাছে আইডি কার্ড জমা দিয়ে বাংলাদেশে জমিতে কাজ করতে আসে।
কাজেই সংক্রমণ ঠেকাতে বিধি-নিষেধ মেনে চলার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারির কোনো বিকল্প নেই।