‘কভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে গত বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মূল্যস্ফীতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তা ৫.৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এতে আয় ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
ঘাটতি রয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে। বাজেট নিয়ে এরই মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের নেতৃস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বাজেটের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে কভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। দীর্ঘ সময় দেশে লকডাউন বা সাধারণ ছুটি চলেছে। মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। এসবের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। মানুষের কর্মসংস্থান ব্যাহত হয়েছে। বহু মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বাজেট সত্যিকার অর্থেই হওয়া উচিত ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট। সেদিক থেকে শিরোনামের সার্থকতা রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এখনো শেষ হয়ে যায়নি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। বাড়ছে দেশেও। তার ওপর চোখ রাঙাচ্ছে বৈশ্বিক মন্দা। মন্দার আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
শতাংশের হিসাবে অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি এরই মধ্যে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বড় শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশের ঘরে আটকে রাখার কথা বলা হলেও অনেক অর্থনীতিবিদ তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাঁদের মতে, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্কায়নে আরো ছাড় দেওয়া প্রয়োজন ছিল। করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ আরো বেশি বিপদগ্রস্ত হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার অব্যাহত অবমূল্যায়নও এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।
আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর আরো চাপ বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বাংলাদেশকে অতি জরুরি ৯টি পণ্য আমদানিতে আগামী অর্থবছরে ৮২০ কোটি ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিও কমে যেতে পারে। তাই বাজেটের ঘাটতি মেটানো কষ্টকর হবে বলেই মনে করছেন অনেকে।
তা সত্ত্বেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক অর্থনীতিবিদ বাজেটের আকারকে যৌক্তিক মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়নে অতীতে যেসব দুর্বলতা দেখা গেছে সেগুলো দূর করতে হবে। অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের জন্য যে ছয়টি চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেছেন, সেগুলো মোকাবেলায় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে হবে। ব্যবসা শুরু ও পরিচালনায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে। আয় ও সম্পদের বৈষম্য কমাতে হবে। সরকারি অর্থের অপচয়, দুর্নীতি দমন ও মুদ্রাপাচার কমাতে হবে। আমরা আশা করি, আগামী বাজেট হবে প্রকৃত অর্থেই দরিদ্রবান্ধব।