বড় বড় অবকাঠামো নির্মিত হলেই সেটাকে অনেকে উন্নয়ন বলে মনে করে, কিন্তু এটা আসল উন্নয়ন নয়। বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, অবকাঠামো তৈরি করে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। অবকাঠামো যদি মানবসম্পদের সঙ্গে না মেলে, তবে তা হবে কঙ্কাল।
অর্থাৎ মানবসম্পদ অত্যন্ত জরুরি।
এই মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে হলে আমাদের শিক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে। আমরা যদি একটু পেছনের দিকে ফিরে দেখি, তাহলে দেখব বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেওয়া হবে তার বড় অংশই যায় বেতন-ভাতা ও ভবন নির্মাণে। শিক্ষার উপকরণ কেনা, ল্যাব নির্মাণেও খরচ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে কি পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হচ্ছে? প্রতিবছর বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ থাকে।
সেই বরাদ্দ নিয়ে অসন্তোষও প্রকাশ করতে দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে, প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষা খাতে বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। সে কথা মিথ্যা নয়।স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি—এই চারটি স্তম্ভের ওপর স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে অবশ্যই শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে।কিন্তু যখন আমরা দেখছি খরচ করতে না পারায় বরাদ্দ করা অর্থ ফেরত যাচ্ছে, তখন বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে ৬৫টি প্রকল্পে ১৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও অর্ধেকের বেশি অর্থ ফেরত যাচ্ছে। এ বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মাত্র ১১.৬৪ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। কাজের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে বেশ কম হওয়ায় আট হাজার ৫৬০ কোটি টাকা বছর শেষ হওয়ার আগেই বরাদ্দ থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে।চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলেছিলেন, এবারের বাজেট বাস্তবভিত্তিক হলেও বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। কথাটি যে একেবারে মিথ্যা নয়, তা প্রমাণ করছে এই খবরটি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, সরকার এ খাতে প্রতিবছর বড় ধরনের বরাদ্দ দিলেও তা খরচ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বড় অংশের টাকা ফেরত যায়।চলতি অর্থবছরে চলমান ৬৫ প্রকল্পের মধ্যে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ৩১টি প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে তিন হাজার ৪২২ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে ৮৯৩ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।খরচ করতে না পারায় টাকাটা ফেরত যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে যোগ্য লোক নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষ জনবল তৈরি করা দরকার। এটা করা না হলে শিক্ষা খাত পিছিয়েই থাকবে।