করোনাভাইরাসে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে খরচ বেড়েছে। একদিকে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির অভাব, অন্যদিকে নতুন করে কর্মহীন হয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে নিয়ে আসা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই করোনাকালে সবারই দৃষ্টি এখন আসন্ন বাজেটের দিকে। আগামী ২ জুন শুরু হবে সংসদের বাজেট অধিবেশন।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আগামী অর্থবছরে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির অনুমোদন দিয়েছে সরকার, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। মূল এডিপির পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের জন্য প্রায় ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ছয় হাজার ৭১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে চার হাজার ৭৫১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা জোগান দেওয়া হবে। নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ২৭.৩৫ শতাংশ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ২০.৩৬ শতাংশ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এককভাবে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ছয় হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রকল্পে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’ প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ২২৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজের দেশকে নিয়ে ভাবতে হবে। সব সময় খালি পরমুখাপেক্ষী থাকলে হবে না। দেশের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো পরামর্শ কারো কাছ থেকে নেওয়া হবে না উল্লেখ করে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকল্পগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এডিপি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পগুলোকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
ভালো এডিপি প্রণয়ন করাই বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে এর যথার্থ বাস্তবায়ন। প্রতিবছরই দেখা যায়, এডিপির একটি অংশ অবাস্তবায়িত থেকে যায়। আশা করি, আগামী অর্থবছরে তা থেকে আমরা অনেকটাই মুক্ত হব।