সাম্প্রতিক সময়ে দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। পদ্মা সেতুসহ ছোট-বড় অনেক নদীর ওপর কয়েক শ সেতু নির্মিত হয়েছে। চার লেন, আট লেন, চৌদ্দ লেনের সড়ক তৈরি হয়েছে। পুরনো রেলপথ সংস্কারসহ নতুন নতুন রেলপথ তৈরি হয়েছে।
রাজধানীতে মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল বা সুড়ঙ্গপথ। কিন্তু প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, যোগাযোগ অবকাঠামোর অভাবে তেমনি অন্ধকারে রয়ে গেছে অনেক জনপদ।
তেমনি একটি জনপদ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বানার নদীর ওপরে পাকা সেতু না থাকায় নদীর দুই পাশে থাকা বিষ্ণরামপুর, আকতা, আনুহাদি ও বাবুগঞ্জ গ্রামের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাঁচটি স্কুল ও তিনটি মাদরাসার শত শত শিক্ষার্থীকে ঝুঁকি নিয়ে কাঠ ও বাঁশের তৈরি নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। এলাকাটি সবজি ও মৎস্য চাষের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত।
কিন্তু সেই মাছ ও ফসল বাজারে পৌঁছাতে সমস্যায় পড়তে হয় স্থানীয় লোকজনের। অন্যান্য মালপত্র আনা-নেওয়ায়ও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
জানা যায়, নদীটির ওপর স্থানীয় লোকজন বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার হতো। তিন দশক আগে ইউনিয়ন পরিষদ বাঁশের সাঁকোটিকে সরু একটি কাঠের সাঁকোতে রূপান্তর করে। এখনো সেই কাঠের সাঁকোই কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচলের প্রধান ভরসা।
প্রতিদিন শিশু, বৃদ্ধসহ হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু পারাপার হয়। নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীকালে সেই প্রতিশ্রুতি রাখা হয় না। উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘সাঁকোটি জনগুরুত্বপূর্ণ।
সাঁকোর দুই পাশে আইডি নম্বরভুক্ত সড়ক না থাকায় ব্রিজ নির্মাণ আমাদের আওতায় পড়ে না। আইডি নম্বর ফেলার জন্য আবেদন করতে বলেছি। আইডি নম্বর হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্রিজ নির্মাণের জন্য আবেদন করা হবে।’ এত দিনেও সেই আইডি নম্বর না হওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কি কোনো দায় নেই? স্বাধীনতার অর্ধশতাধিক বছর পরও একটি অঞ্চলের মানুষ কেন এভাবে অন্ধকারে পড়ে থাকবে?
শুধু ফুলবাড়িয়া নয়, দেশের আরো অনেক অঞ্চলে এমন পকেট এলাকা রয়েছে, যেখানে কোনো ধরনের আধুনিক যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। সেসব পকেট এলাকার মানুষ যেমন আধুনিক যোগাযোগের সুযোগ-বঞ্চিত, তেমনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। আমরা চাই, অবিলম্বে বানার নদীর ওপর পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।