এবার করোনা সংকটে যখন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানায় উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়ে, তখন কৃষিই অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। যদিও কৃষির বিপদ কেবল করোনায় সীমাবদ্ধ ছিল না। আম্পান নামের ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় আঘাত হানে। এরপর দফায় দফায় বন্যা হানা দেয় দেশের প্রায় অর্ধেক জেলায়। কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী ১২ এপ্রিল কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেন।
এ তহবিলের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদে পুনঃ অর্থায়ন-সুবিধা পাবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে সুদ হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। ঋণ বিতরণের বেঁধে দেওয়া সময় ৩০ সেপ্টেম্বর। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এ তহবিল থেকে ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ঋণ পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৮১৫ কৃষক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। গত আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা এবং বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স, ওয়ান, ইউনিয়ন, মধুমতি ও সীমান্ত ব্যাংক এ তহবিল থেকে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা এবং ওয়ান ব্যাংক ৬২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছিল।
কৃষিঋণের ক্ষেত্রে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিছু বাস্তব সমস্যার কথা বলেছেন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নেটওয়ার্ক না থাকা অন্যতম। ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক উপজেলা পর্যন্ত আছে। কিন্তু কৃষকদের ঋণ দিতে হবে গ্রামে গ্রামে গিয়ে। সেখানে বেসরকারি ব্যাংকের নেটওয়ার্ক না থাকলে এনজিওর মাধ্যমেও দিতে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনতা ব্যাংকের শাখা আছে। কিন্তু তিন মাসে ব্যাংকটি এক টাকাও কৃষিঋণ দেয়নি। এই দায়িত্বহীনতার জবাব কী? সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতাই সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে।
ঋণের পরিমাণ কম থাকায় অনেক ব্যাংক কৃষিঋণে নিরুৎসাহী। কিন্তু তাদের মনে রাখা দরকার, কৃষিই দেশের ১৭ কোটি মানুষের আহার জোগায়। কৃষির উন্নয়ন ছাড়া দেশের অর্থনীতিকে যে খুব বেশি দূর এগিয়ে নেওয়া যাবে না, এবার করোনা সংকটেও সেটি প্রমাণিত। তাই কৃষি খাতে ঋণের ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কে দেখা ঠিক ঠিক হবে না।
নির্ধারিত সময়ে ঋণের তিন-চতুর্থাংশ বিতরণ না হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফিলতিই দায়ী। তারা ঋণ বিতরণের সময়সীমা আরও তিন মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ঋণ পেতে দেরি হলে কাজটি পরেও শুরু করা যায়। কৃষিঋণের ক্ষেত্রে এটি খাটে না। মৌসুম থাকতেই কৃষকদের কাছে ঋণ পৌঁছাতে হবে। কেননা মৌসুম চলে যাওয়ার পর ঋণ পেলেও কোনো লাভ হবে না।
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরই ব্যাংকিং খাতের যেকোনো আইন বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা না-করা নির্ভর করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য। বর্ধিত সময়ের মধ্যেও যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না, তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। যারা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হবে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কেবল নির্দেশনা দিয়ে বসে থাকলে হবে না। ব্যাংকগুলো যাতে নির্দেশনা পালন করে, সে জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি থাকতে হবে।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন