নদী-খাল-জলাশয় দখলে গোটা দেশ জর্জরিত। সরকারি নানা প্রকল্পে দখল তো আছেই, ব্যক্তিগত প্রভাব কাজে লাগিয়েও যে যেভাবে পারছে দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক অঞ্চলে এমন দখলবাজির কারণে সবচেয়ে ভোগান্তি ও ক্ষতির শিকার হন কৃষকেরা। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নে।
সেখানকার একটি খালে এক ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে বাঁধ দেওয়ায় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে পাঁচটি গ্রামের কৃষকেরা জমিতে চাষ করতে পারছেন না। ১০ বছর ধরে এমন পরিস্থিতির ভুক্তভোগী তাঁরা। উপজেলা প্রশাসনের কাছে ধরনা দিয়েও এ সমাধান মিলছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বর্ষাকালে মাশাইল, নালী, দিয়াইল, গাংডুবি, নিমতা—এ পাঁচ গ্রামের পানি একটি খাল দিয়ে বের হয়ে পাশের কান্তাবতী নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রায় এক যুগ আগে চান মিয়া নামে ইউপির সাবেক এক সদস্য খালটির বেশ কিছু অংশে বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়।
পরবর্তী সময়ে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে একটি রাস্তা নির্মাণ করায় পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পাঁচ গ্রামের প্রায় দুই হাজার বিঘা কৃষিজমিতে বছরের বেশির ভাগ সময়ে জমে থাকছে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চার শতাধিক কৃষক। একে তো মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপর্যস্ত জনজীবন, তার মধ্যে জমিতে চাষ বন্ধ—এতে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছেন তঁারা।
সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের প্রভাবে খালের ওপর বাঁধ দিয়ে একাংশে বসতবাড়ি করেন চান মিয়া। আবার পাশেই আরেক জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে মাটির সড়ক। ফলে সেখানে পানিপ্রবাহের সুযোগ আর নেই। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষিজমিগুলোতে আবাদের জন্য মাত্র চার মাস সময় পাওয়া যায়।
এতে অনেক সময় ফসল ঘরে তোলার সুযোগ থাকে না কৃষকের। যেমন গত জানুয়ারি মাসে তিন বিঘা জমিতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করে পেঁয়াজের বীজতলা তৈরি করেছিলেন এক কৃষক। তখন খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় বীজতলাটি নষ্ট হয়ে যায়। এমন অবস্থা আরও অনেক কৃষকের। তাঁদের এই আর্থিক ক্ষতির দায় কার?