উজান থেকে প্রবল বেগে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল। সেই সঙ্গে রয়েছে ভারি বৃষ্টিপাত। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে শত শত গ্রাম। উত্তরে কিছু কিছু পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা ও পদ্মার পানি দ্রুত বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে মেঘনা অববাহিকায়ও। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, খোয়াই ও কংস নদের পানি বিপত্সীমার ওপরে রয়েছে। শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জের নিচু এলাকাগুলো এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে ফেনীর বেশ কিছু গ্রাম। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের ১৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী অনেক এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ময়মনসিংহে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। হালুয়াঘাট পৌর শহরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী যাদুকাটার পাহাড়ি ঢলে নিখোঁজ দুটি শিশুর মৃতদেহ দুদিন পর বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধার করা হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাত আরো এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ুর প্রচলিত ধারা দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বন্যা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা ক্রমেই বাড়ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, তলিয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল। এই জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে পারব না। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করতে পারি। বাংলাদেশে সে চেষ্টাও চলছে।
কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। করোনা মহামারির কারণে দেশব্যাপী এক বিপর্যয়কর অবস্থা বিরাজ করছে। কোনোভাবেই মহামারির লাগাম টানা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় বন্যার প্রকোপ বেড়ে গেলে মানুষের দুর্ভোগের সীমা-পরিসীমা থাকবে না। ত্রাণশিবিরে মানুষকে গাদাগাদি করে রাখা হলে করোনা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। সেই সঙ্গে করোনার মতো লক্ষণ নিয়ে সর্দি-কাশি-নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়লে রীতিমতো চিকিৎসা সংকট দেখা দেবে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন থেকে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে অন্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়, শুধু বন্যায় তার চেয়ে কয়েক গুণ ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এর একটি বড় কারণ নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া এবং উজানে নদীগুলোর অস্বাভাবিক ব্যবহার। শুষ্ক মৌসুমে উজান থেকে নদীগুলোতে পানি প্রায় আসেই না। ভরাট প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। বর্ষায় উজানের সব বাঁধ খুলে দেওয়ায় একসঙ্গে এত পানি নেমে আসে যে আমাদের নদীগুলো তা ধারণ করতে পারে না। ফলে বন্যা সমস্যার সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। তার আগে বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে হবে।