টিকটক ভিডিও তৈরির ফাঁদে ফেলে তরুণীদের ভারতে পাচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতে কয়েকজন মিলে এক বাংলাদেশি তরুণীর যৌন নির্যাতনের ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টির অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। এরপর নারী পাচারকারীচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
পাচারের শিকার এক কিশোরী দেশে ফেরার পর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করে। এই আসামিদের মধ্যে পাঁচজন দেশে অবস্থান করছে বলে তথ্য ছিল পুলিশের কাছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে মঙ্গলবার রাতে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের মধ্যে একজন স্বীকার করেছে, ওই কিশোরীসহ দেড় হাজারের বেশি নারীকে তারা ভারতে পাচার করেছে। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দুই আসামি মামলার বাদী ভুক্তভোগীসহ পাঁচ শতাধিক নারীকে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে যেতে সহায়তার কথা স্বীকার করেছে। তারা ভুক্তভোগী নারীদের মোটরসাইকেলের মাধ্যমে সীমান্তে মানবপাচারকারীদের হাতে তুলে দেয় বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে জানিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হওয়া তিন নারী পাচারকারীকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে আরো চারজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানাচ্ছে, ঘটনার শিকার তরুণী ও কিশোরীরা উচ্চাভিলাষী। তারা ভিডিও শেয়ারিং সাইট টিকটক ও লাইকিতে অভিনয়ের চেষ্টা করছিল। কেউ আবার মডেল হতে আগ্রহী।
হৃদয় ওই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে। ধর্ষণের পর তাদের নানা ভয় এবং মডেল বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে নিজের বাসায় আটকে রাখা হতো। মডেল হওয়ার স্বপ্নে ও আতঙ্কে তারা মুখও খুলত না। গ্রেপ্তার একজনের ডায়েরিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ভিকটিমের আধার কার্ড নম্বর এবং ভারতে পাচারকৃত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভুক্তভোগীর নাম ও মানবপাচারে জড়িতদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া অন্য দুজন সীমান্তবর্তী এলাকায় পাচারের কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মিত কক্ষে ভুক্তভোগীর অবস্থানে সহায়তার পাশাপাশি তাদের মোটরসাইকেলযোগে সীমান্তের শেষ প্রান্তে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
এই নারী পাচারকারীচক্র দেশের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে পাচার হয়ে যাওয়া তরুণীদের ফিরিয়ে আনার জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।