মানুষ চিড়িয়াখানায় যায় বিনোদনের জন্য। নানা ধরনের পশুপাখি দেখে, তাদের চলাফেরা, আচার-আচরণ দেখে শিক্ষা বা আনন্দ পাওয়ার জন্য। কিন্তু ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানাসহ দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় গিয়ে পশুদের দুরবস্থা দেখে মানুষকে কষ্ট পেতে হয়। মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতে হয়।
সারা শরীরে ঘা। মাছির যন্ত্রণা তো আছেই, মাঝেমধ্যে কাক এসে ঠোকর দিয়ে মাংস খাওয়ার চেষ্টা করছে। কেবল ইমু আর গাধা নয়, প্রতিবেদক আরো অনেক প্রাণীরই প্রায় একই রকম অবস্থা দেখতে পান। মদনটাক, উট, হাড়গিলা, শকুন, ঘোড়াসহ আরো কিছু প্রাণীর দেহেও দেখা গেছে ক্ষত। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনেক শেডেই কোনো খাবার দিতে দেখা যায়নি; যদিও সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে খাবার দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে অর্ধাহারে, অনাহারে, রোগেশোকে ভুগে ভুগে প্রাণীগুলো অকালেই মারা যায়। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে আবারও বিভিন্ন প্রাণী কিনে আনা হয়। আবারও অযত্নে-অনিয়মে এদের মৃত্যু হয়। প্রাণী অধিকারকর্মীদের মতে, এগুলো বন্য প্রাণীর সঙ্গে নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু নয়।
বছরের শুরুতে সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানায় প্রাণী মৃত্যু নিয়ে বেশ হৈচৈ হয়েছিল। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ১১টি জেব্রা, একটি সিংহ ও একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছিল। এ বছরের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় চিড়িয়াখানায় ১২ বছরের একটি সিংহী মারা গিয়েছিল। রংপুর চিড়িয়াখানায় শাওন নামে একটি বাঘিনীর মৃত্যু হয় ৪ ফেব্রুয়ারি।
একই অবস্থা দেশের অন্যান্য চিড়িয়াখানায়ও। বছরের প্রথম দিকে বন্ধ হয়ে যায় কুমিল্লা চিড়িয়াখানা। বন্ধ হওয়ার আগে সেখানে প্রাণ হারিয়েছে সিংহ-হরিণসহ বেশ কিছু প্রাণী। ব্যাপক সমালোচনার মুখে কিছু প্রাণী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় স্থানান্তর করে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পত্রপত্রিকায় প্রাণীদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুর এমন আরো অনেক খবর আসতে থাকে। বেশির ভাগ খবরেই এসব প্রাণী মৃত্যুর জন্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, পর্যাপ্ত খাদ্য না দেওয়া, চিকিত্সা না দেওয়াকে দায়ী করা হয়। বর্তমান প্রতিবেদনেও সেসব অনিয়মেরই পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে।
সারা দুনিয়ায় চিড়িয়াখানা যেভাবে পরিচালনা করা হয়, আমাদেরও সেভাবেই তা পরিচালনা করতে হবে। কোনোভাবেই প্রাণীদের নিয়ে এমন নিষ্ঠুরতা করা উচিত নয়।