অপরাধী যে-ই হোক, যে দলেরই হোক—তাদের অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। ১১৬, ১১৭ ও ১১৮তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেধা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মননকে দেশের মানুষের স্বার্থে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আগেও অনেকবার অনুরূপ আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যেন কোনোভাবেই তাদের পুরনো রূপ বা কাজকর্মের পুরনো ধরন বদলাতে পারছে না।
আইনের শাসন বা সুশাসনের ঘাটতি থাকলে কিংবা সরকারি কাজে জবাবদিহির অভাব হলে দুর্নীতির সঙ্গে সঙ্গে সমাজে নানা অসংগতি দেখা দেয়। অপরাধপ্রবণতা বাড়ে। কয়েক দশক ধরে তা-ই হয়েছে। দুর্নীতি ক্রমেই ব্যাপকতা পেয়েছে। রাতারাতি এ থেকে উত্তরণ হয়তো সম্ভব হবে না। তবে আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নজরদারি বাড়ানো গেলে এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে জবাবদিহি বৃদ্ধি পেলে দুর্নীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। সে কাজটি প্রশাসনকেই করতে হবে। কিন্তু আমরা অতীতে কী দেখেছি?
দুর্নীতি কমানোর বা আইন প্রয়োগের দায়িত্ব যাঁদের হাতে, তাঁদের একটি বড় অংশ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘সমাজে যেসব উপসর্গ মাঝে মাঝে দেখা দেয়, যেমন—নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি—এসবের বিরুদ্ধে আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বক্তব্য তুলে ধরেন।
১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’ নিজের জীবন থেকে স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে শিখেছি, রিকশাওয়ালাকে আপনি বলে সম্বোধন করেছি।
কারণ আমাদের বাবা-মা সেটাই শিখিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা।’
আমাদের প্রশাসনের দক্ষতা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই বাধার সৃষ্টি করছে। ঘুষ-দুর্নীতি কমছে না। সেবার মান নিয়েও রয়েছে অনেক অসন্তুষ্টি।
বর্তমান সরকার প্রশাসনে কর্মরতদের সুযোগ-সুবিধা অনেকে বাড়িয়েছে। এখন তাদের উচিত, রাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রশাসনকে এগিয়ে নেওয়া।
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন