অভাব-অনটন বেশি থাকা এবং আয়-উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান। সাম্প্রতিক সময়ে পুরুষের পাশাপাশি বিদেশগামী নারী কর্মীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। তাঁরা যান মূলত মধ্যপ্রাচ্যে এবং গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে। কিন্তু সেখানে নারী কর্মীরা শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। গত ১১, ১২ ও ১৩ জুন ‘প্রবাসী নারী কর্মীদের দুঃখগাথা’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে শারীরিক ও মানসিক ক্ষত নিয়ে ফিরে আসা প্রবাসী নারী কর্মীদের স্বপ্নভঙ্গের কথা। ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যে বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন মোট চার লাখ ২৫ হাজার ৬৯৭ জন কর্মী। এর মধ্যে ৫০ হাজার ৬১৯ জন নারী। আর তাঁদের ২২ হাজারই সৌদিফেরত। তাঁদেরও বেশির ভাগই নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
ব্র্যাকের তথ্য মতে, ১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ লাখ নারী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারানো ও পঙ্গু হওয়া নারীর সংখ্যা হাজারের বেশি। বাড়ছে লাশ হয়ে ফিরে আসার সংখ্যাও। বেসরকারি সংস্থা ‘ব্র্যাক’ ও ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ’ (বিলস)-এর তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পাঁচ শতাধিক নারী শ্রমিকের মরদেহ দেশে এসেছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক মরদেহ এসেছে সৌদি আরব থেকে। দায় কার? শুধুই রিক্রুটিং এজেন্সির? নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর? সরকারের কি কোনো দায়িত্ব নেই?
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয়। নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা কেন? ২০১৯ সালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনে নারীদের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তনে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি? সম্ভবত না। আর সে কারণেই নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা নারী কর্মীর সংখ্যা শুধু বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গৃহকর্মী নিয়োগের কথা বলে তাঁদের ব্যবহার করা হচ্ছে যৌনকর্মী হিসেবে। তাঁরা সেখানে গিয়ে কী কাজ করছেন, কেমন আছেন, তার দেখভালও সরকার করে না। বিদেশে নারী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দালালদের প্রতারণা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে সক্রিয় হতে হবে।