বছরের শুরুতে যেসব প্রবাসী শ্রমিক দেশে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন, কোভিড-১৯-এর কারণে তাঁরা আটকা পড়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এই শ্রমিকের সংখ্যা হবে সাড়ে চার লাখ। জুন পর্যন্ত সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ছিল। জুলাই মাসে সীমিত পর্যায়ে বিমান পরিবহন শুরু হলে কিছু কিছু প্রবাসী কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
কিন্তু যাত্রীর তুলনায় ফ্লাইট কম থাকায় টিকিটের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। প্রবাসীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ঘুরেও তাঁরা টিকিট পাচ্ছেন না। বাড়তি ভাড়া দিয়েও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তারা এই মুহূর্তে নতুন টিকিট দিচ্ছে না। যেসব যাত্রীর ফিরতি টিকিটের মেয়াদ (ছয় মাস) আছে, কেবল তাঁদের টিকিটই নবায়ন করা হচ্ছে। তারা কোনো যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে না।
বিমান বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা-আবুধাবি-ঢাকা রুটে ছয়টি, ঢাকা-দুবাই-ঢাকা রুটে সাতটি, ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটে একটি, ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে দুটি ও ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা রুটে দুটি যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালু রেখেছে। এ ছাড়া এমিরেটস, কাতার ও টার্কিশ এয়ারলাইনসের মধ্যপ্রাচ্যগামী কিছু ফ্লাইট চলাচল করছে।
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বিমান চলাচল এখনো বন্ধ আছে। যেসব দেশ চালু করেছে, তারাও নানা রকম বিধিনিষেধ জারি করেছে। ওয়ার্ক পারমিট না থাকলে কোনো যাত্রীকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বরে পরিবহনের সময়সূচি অনুমোদন না করায় বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো টিকিট দিতে পারছে না। অন্যদিকে আরব আমিরাত ফ্লাইটের আসন ২৪০টি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের যেসব ফ্লাইট আন্তর্জাতিক রুটে চলছে, তার আসনসংখ্যা অনেক বেশি। বাকি আসনগুলো খালি থাকছে। এটিও টিকিটসংকটের অন্যতম কারণ।
দুঃখজনক ঘটনা হলো, আবুধাবি থেকে ৬৮ জন প্রবাসী শ্রমিককে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে, যাঁরা রোববার ঢাকা থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। এই প্রবাসীরা যেসব কোম্পানি ও এজেন্সির মাধ্যমে আবুধাবিতে গিয়েছিলেন, সেসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আমিরাত সরকার বাতিল করে দেয়। আবুধাবি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাঁদের ভেতরে ঢুকতেই দেয়নি। তাঁরা সোমবার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে বিক্ষোভ করেছেন। আবুধাবিতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁরা সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
কাদের কারণে এই প্রবাসী শ্রমিকেরা হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হলেন, সেটি তদন্ত করে দেখা দরকার। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের কোনো অবহেলা ছিল না। বিমান পরিবহন সংস্থাটি কীভাবে কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও এজেন্সির টিকিট গ্রহণ করল? দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
করোনাকালে সব পরিবহন ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। তাই বলে এমন কড়াকড়ি আরোপ করা ঠিক নয়, যাতে যাত্রীরা অযথা হয়রানির শিকার হন। নিরাপদ ভ্রমণের জন্য যাত্রীরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতেও রাজি আছেন।
প্রবাসী যাত্রীদের ছুটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। করোনার কারণ দেখিয়ে অনেকে সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন। এরপরও যদি নির্দিষ্ট তারিখে কর্মস্থলে যোগ দিতে না পারেন, তাহলে তাঁরা চাকরি হারাবেন। করোনার কারণে অনেক প্রবাসী কাজ হারিয়েছেন। যাঁদের কাজ আছে, তাঁরাও টিকিটের কারণে সমস্যায় পড়বেন, সেটি কোনোভাবে কাম্য নয়।
এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা জরুরি।